দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে এখন অনেকটা কোনঠাসা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো পর্যন্ত শহরের খ্যাতনামা ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযান চোখে পড়েনি। এদিকে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে ইয়াবা গডফাদাররা ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছে স্থানীয়রা। তাদের দাবী জেলার বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা গডফাদারদের বাড়ি ঘর ভাঙ্গা হলেও পাহাড়তলীতে নতুন করে ছাদ ঢালাই দিচ্ছেন ইয়াবা গডফাদার। আর তারা এখনো এলাকাতে থাকায় আরো নতুন করে ইয়াবা ব্যবসায় জড়াচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলেরা।
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর সমাজ সেবক হাজী নুর আহাম্মদ বলেন, ‘ইয়াবা আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় শহরের পাহাড়তলীতে ইয়াবা প্রচার প্রসার যারা বাড়িয়েছে তারা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা গডফাদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও মূলত পাহাড়তলীতে কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। এতে এলাকার যারা স্বীকৃত ইয়াবা ব্যবসায়িদের দৌারাত্ব আরো বেড়ে যাচ্ছে। আর তারা দিন দিন নতুন উঠতি বয়সের ছেলেদের দিয়ে ইয়াবা চালান করছে। এবং শত শত যুবক ইয়াবা সেবন করছে। আমরা এলাকার মানুষ হিসাবে ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করছি’।
স্থানীয়দের দাবি, পাহাড়তলীর সব চেয়ে বড় ইয়াবা গডফাদার হচ্ছে জহির হাজীর ছেলে সাহেদুল ইসলাম প্রকাশ ভুলু। সেই ৫-৬ বছর আগে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। মাঝে মধ্যে তার বাড়িতে পুলিশের অভিযান হলেও তাকে কখনো আটক করা হয়নি। যার ফলে শূন্য থেকে বর্তমানে কোটি পতি ভুলু। বর্তমানে পাহাড়তলীতে ৬-৭ গন্ডা জমির উপর তার তিন তলা বাড়ি গড়ে উঠেছে। এছাড়া এখানে আরো অনেক সহায় সম্পদ আছে। এছাড়া ভুলুর আত্বীয় স্বজনও ইয়াবার কল্যানে অনেকে লাখপতি বনে গেছে। কিছুদিন আগেও যারা দোকানে একটি চা খেলে টাকা দিতে পারতো না তারা এখন মটর সাইকেল নিয়ে ঘুরেন।
সরজমিনে পাহাড়তলীতে গিয়ে দেখা গেছে, আলিশান বাড়ি তৈরি করেছে ইয়াবা ব্যবসায়ি ভুলু। সেখানে বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া আছে। এদের বেশিরভাগই টেকনাফ এবং রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট।
পাহাড়তলীর আরো কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভুলুর বাবার প্রকৃত বাড়ি মিয়ানমারে। তারা এখনে এসেছে ১৯৯০ সালের দিকে প্রথম থেকে তার পিতা জহির হাজীর কার্যকলাপ ছিল বেপরোয়া। ভুলুসহ তার অনান্য ছেলেরা বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। পাহাড়তলীতে সর্ব প্রথম ইয়াবা যুব সমাজের হাতে পৌছে দেয় ভুলু। তার সাথে সহযোগী হিসাবে আছে আরো অনেকে। এছাড়া পশ্চিম পাহাড়তলীর হালিমা পাড়াতে টেকনাফ থেকে এসে জমি কিনে বাড়ি করেছে আরেক ইয়াবা গডফাদার আইয়ুব। চলতি বছরের প্রথম দিকে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল সংখ্যাক মাদক ও নগদ টাকা উদ্ধার করে। কিন্তু কিছুদিন পরে জেল থেকে বের হয়ে সে আরো বেপরোয়া ভাবে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। এখন তার স্ত্রী এবং মেয়েরাও টেকনাফ থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান এনে বিক্রি করে বলে প্রমান আছে। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী শামসুর ভাই শহিদুল্লাহ, ছেলে নিশান, ইছুলুঘোনার আরিফসহ অনেকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। এছাড়া যুবদল নেতা নেজামসহ আরো কিছু তালিকাভুক্ত ব্যবসায়িরাই ধ্বংস করছে যুব সমাজ। মুলত তারাই বিভিন্ন উঠতি বয়সের ছেলেদের ব্যবহার করে ইয়াবা বেচা কেনা করছে।
স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম বলেন, ‘এখানে মুলত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হওয়াতে কেউ কাউকে নিয়ন্ত্রন করার নেই। আর ইয়াবা ব্যবসা করে অনেকে এখন কোটিপতি। টাকার জোরে তারা আর কাউকে মানতে চায়না। অনেক সময় মাদক বা ইয়াবা বিরুদ্ধে মসজিদে বক্তব্য দিলে তারপরে অনেকে ফোন করে হুমকি দেয় এবং নানানভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা করে। দ্রুত ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধ করা না গেলে সামনের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলার আশরাফুল হুদা জামশেদ বলেন, ‘পাহাড়তলীতে একটি সিন্ডিকেট আদিকাল থেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারাই এখন ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়িদের নিয়ন্ত্রন করে। আমরা এসব মাদক ব্যবসায়িদের চিরতরে উচ্ছেদ চাই। একই সাথে দ্রুত মাদক ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি।
এ ব্যপারে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সোমেন মন্ডল বলেন, ‘কোনো মাদক ব্যবসায়ি ছাড় পাবে না। পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে’।