গর্ভবতী নারীদের শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য আমেরিকায় ভ্রমণ ঠেকাতে নতুন নিয়ম চালু করেছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। নীতিটি গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়। বার্থ ট্যুরিজম বা জন্ম দেওয়ার উদ্দেশে ভ্রমণ নামে পরিচিত এই বিধিকে একটি কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
নতুন এই নিয়মে একজন গর্ভবতী নারী যদি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে তাকে এটা প্রমাণ দিতে হতে পারে যে মার্কিন মাটিতে সন্তান জন্ম দেওয়া ছাড়া তার ভ্রমণের নির্দিষ্ট অন্য কারণ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রায় সব শিশু দেশটির নাগরিকত্ব পায়, যে আইনের সমালোচনা করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তার প্রশাসন বলেছে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন ভ্রমণনীতি প্রণয়ন জরুরি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যেখানে ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা আইনগতভাবে সব ব্যক্তিকে’ নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
তথাকথিত অ্যাংকর শিশু অথবা যে শিশুর মায়েরা ভিন্ন দেশের নাগরিক কিন্তু নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় সেখানে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছে কনজারভেটিভরা।
যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের স্বজন থাকার ভিত্তিতে ভিসা পাওয়ার প্রথাটি ‘চেইন মাইগ্রেশন’ নামে পরিচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নীতিরও সমালোচনা করেন।
নতুন নিয়ম কী আছে?
বি ভিসা প্রত্যাশী ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে এই নতুন নিয়মটি প্রযোজ্য হবে, যা অনভিবাসীদের জন্য জারি করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ‘প্রাথমিক উদ্দেশ্য’ যদি সেখানকার কাগজপত্র পাওয়ার আশায় সন্তান জন্ম দেওয়া হয়, তাহলে কনস্যুলার কর্মকর্তারা তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। নতুন এই বিধিতে কনস্যুলার কর্মকর্তাদের এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই চূড়ান্ত বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা ঝুঁকির মুখে পড়া এবং বার্থ ট্যুরিজম শিল্পকে কেন্দ্র করে অপরাধমূলক কাজ বেড়ে যাওয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। যেটা এর আগেও এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
নীতিতে আরো বলা হয়েছে, বার্থ ট্যুরিজম শিল্প জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে।
চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে ইচ্ছুকদের জন্যও এটি বিধির নিয়মগুলোকে আরো কড়া করা হয়েছে।
ভিসা আবেদনকারীদের এখন প্রমাণ করতে হবে যে তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করার উপায় এবং উদ্দেশ্য আছে এবং একজন কনস্যুলার কর্মকর্তাকে বোঝাতে হবে যে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ইচ্ছুক এমন একজন ডাক্তারের ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছেন। হোয়াইট হাউস নতুন এই বিধিমালার প্রশংসা করেছে।
প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি স্টেফানি গ্রিশাম এক বিবৃতিতে বলেছেন যে ‘বার্থ ট্যুরিজম শিল্প’ হাসপাতালের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং এই শিল্পকে ঘিরে অনেক অপরাধ হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই চমকপ্রদ অভিবাসনের ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করে দিলে স্থানীয়দের মধ্যে বাড়তে থাকা ক্ষোভ প্রশমন করা যাবে। এই আইনের চর্চার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সুরক্ষা যে ঝুঁকির মুখে পড়েছিল সেখান থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে।
একজন গর্ভবতী নারী যদি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে তাকে কিছু বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সবশেষ তথ্য অনুসারে, বিদেশি বাসিন্দারা ২০১৭ সালে প্রায় ১০ হাজার শিশুর জন্ম দিয়েছিল। এই সংখ্যাটি ২০০৭ সালের তুলনায় ৭ হাজার ৮০০ জন বেশি।
কঠোর অভিবাসন আইন সমর্থনকারী সংস্থা সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের ধারণা, ২০১৬ সালের শেষের ছয় মাস এবং ২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে অস্থায়ী পর্যটন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা নারীরা প্রায় ৩৩ হাজার শিশুর জন্ম দিয়েছেন।
মার্কিন কাস্টমস এবং সীমান্ত সুরক্ষা অনুযায়ী বর্তমানে গর্ভবতী নারীরা শিশুর জন্ম হওয়া পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে সন্তান সম্ভবা এই মায়েরা যদি ভিসায় বেধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের চাইতে বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে চান বা তাদের যদি সন্তান জন্মদানের খরচ মার্কিন করদাতাদের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা থাকে তাহলে ওই মায়েদের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করা হতে পারে।