শিশুর সঙ্গে গড়ে উঠুক মায়ের আন্তরিক সম্পর্ক

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে মায়ের বুকে দিতে হয়

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

শিশুর সঙ্গে গড়ে উঠুক মায়ের আন্তরিক সম্পর্ক

  • বেদৌরা বিনতে আফাক
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর, ২০১৮

শিশুর সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক নাড়ির। আর আত্মিক এই সম্পর্ককে আরো বেশি নিবিড় ও সুন্দর করে তুলতে রয়েছে বেশকিছু উপায়, যা শিশুকে আপনার আরো কাছে নিয়ে আসবে, আর সম্পর্ককে করে তুলবে স্বর্গীয়। মা ও শিশুর সুন্দর সম্পর্ক শিশুর মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। কিছু কৌশলে মায়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক সুন্দর রাখা সম্ভব। আজ এমনই কিছু কৌশল সম্পর্কে আপনাদের জানাব। কী করে গড়ে তুলতে পারেন এই নিবিড় সম্পর্ক, হবু ও সদ্য মায়েরা জেনে রাখুন এর বেশ কিছু উপায়-

 

·      শিশুর সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয় মায়ের গর্ভাবস্থার সময় থেকেই। শিশু যখন মায়ের গর্ভে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, তখন থেকেই অনাগত সন্তানটির জন্য মায়ের এক অদৃশ্য ভালোবাসা তৈরি হয়। গর্ভের শিশুর হূদস্পন্দন, তার নাড়াচাড়া মায়ের মধ্যে তার অনাগত সন্তানের জন্য ভালোবাসা এবং মায়া বাড়াতে থাকে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা দারুণ এক তথ্য দিয়েছেন, গর্ভবতী মহিলাদের ডেলিভারির তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নামক হরমোন তৈরি করে, যা সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

·      সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে মায়ের বুকে দিতে হয়। সন্তানের ত্বক যেন মায়ের ত্বক স্পর্শ করে। এই স্পর্শ শিশুকে প্রথম মায়ের অস্তিত্ব প্রমাণ দেয়।

·      আপনার অস্তিত্বের সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দিতে সন্তানের জন্মের পর থেকেই কথা বলুন, খেলা করুন, হাসুন। এ সময় শিশুরা কথা বলতে না পারলেও আপনার প্রতিটি কথা সে বুঝতে পারে। আপনার কণ্ঠস্বর, শারীরিক ভাষা আপনাকে অন্যদের কাছে থেকে আলাদা করে তুলবে। সারাদিন আপনার কণ্ঠস্বর শিশুকে আরো ভালো করে আপনাকে চিনতে ও বুঝতে সাহায্য করবে। তাই শিশুর সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলুন।

·      শিশুর সঙ্গে প্রতিদিন কাটান বেশ নিবিড় কিছু মুহূর্ত। শিশু ও মায়ের মধ্যে এই সময়গুলোতে বেশ ভালো বোঝাপড়া হয়ে ওঠে। শিশু বুঝতে শেখে মা তার জন্য কতটা প্রয়োজনীয় ব্যক্তি।

·      শিশুদের মতো চিন্তা করার চেষ্টা করুন। এতে আপনি আপনার শিশুর পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা খারাপ লাগা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন, এই সম্পর্কটি শুধু দায়িত্ব পালনের না হয়ে যেন ভালোবাসার সম্পর্ক হিসেবে গড়ে ওঠে।

·      শিশুর প্রয়োজন বুঝতে পারা সহজ কোনো বিষয় নয়। শিশু তার প্রয়োজন নানা ধরনের ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রকাশ করে। আপনার শিশুর প্রকাশভঙ্গিটি খুঁজে বের করুন। শিশুর মুখের এবং শরীরের ভঙ্গির দিকে খেয়াল রাখুন। আপনার কণ্ঠস্বর শুনলে সে কি হাত-পা ছুড়ে ফেলে, নাকি খুশি হয়ে ওঠে- সে দিকে লক্ষ করুন। শিশুর কান্নার ধরন বোঝার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন তার পছন্দের কাজটি বার বার করতে, এতে মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো মজবুত হয়।

·      শিশুর সঙ্গে ধীরে ধীরে কথা বলুন। ঘুম পাড়ানোর সময় ছড়া বা গান গাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এতে শিশুর সঙ্গে আপনার একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে। অনেকে সন্তানকে আলাদা ঘুম পাড়ান। এটি শিশুর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে এবং একসময় সে নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করতে থাকে।

·      সন্তানের সঙ্গে সুন্দর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন অসীম ধৈর্য এবং ভালোবাসার। সন্তান জন্মের পর প্রথম কয়েকটি মাস অন্যরকম হয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনকে মেনে নিন। মনে রাখবেন, আপনার ছোট একটি উদাসীনতা তৈরি করে দিতে পারে সন্তানের সঙ্গে সারাজীবনের জন্য দূরত্ব।

·      শিশুর সঙ্গে নিজেও মেতে উঠুন নানান রকম খেলাধুলা, নাচগানসহ বিভিন্ন কর্মোদ্দীপক কাজে। এতে মা ও শিশু দুজনেরই শরীর ও মন ভালো থাকবে।

·      মায়ের আদর ভালোবাসামাখা ছোঁয়া শিশুর মনন ও মস্তিষ্ক উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা পালন করে। বার বার আদরমাখা ছোঁয়া আপনার শিশুকে বুঝতে বাধ্য করে আপনার জীবনে তার গুরুত্ব কতটা জুড়ে রয়েছে।

·      শিশুর ছোটবেলা থেকেই অর্থপূর্ণ কথা বলুন ও চোখে চোখ রেখে কথা বলুন সবসময়। এই চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।

·      শিশুকে যতটা সম্ভব নিজের কাছে রাখতে চেষ্টা করুন, শিশুর ছোট ছোট কাজগুলো নিজেই করুন। অনেক মা বিশেষত কর্মজীবী মায়েরা শিশুকে খাওয়ানোর দায়িত্ব অন্য কারোর কাছে দিয়ে থাকেন। অথচ খাওয়ানো এবং ঘুম পাড়ানোর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি শিশুর সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটে মায়ের। এই সময়গুলোতেই মায়ের প্রতি বিশ্বাস আর নির্ভরতা বাড়ে শিশুর। শত ব্যস্ততার মধ্যেও শিশুর জন্য সময় বের করুন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads