ধর্ম

শিশুর ইসলামি নামের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০

এসএম আরিফুল কাদের

 

 

 

মানুষের পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে তার নাম। শিশুর ইসলামি নাম রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামের ব্যাপারে উম্মতদেরকে গুরুত্ব দিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। ভালো নাম রাখার পাশাপাশি মন্দ ও অসুন্দর নাম রাখা থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক করেছেন। যে নাম মানুষ দুনিয়ায় আসার পর লাভ করে এবং মৃত্যুর পরেও তা বেঁচে থাকে। জন্মের পর থেকে সন্তানের প্রতি পিতামাতার যেসব অধিকার রয়েছে তন্মধ্যে শিশুর ইসলামি সুন্দর নামও তার জন্মগত অধিকার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের নাম (ইসলামি সুন্দর নাম) রাখো।’ (সহিহ তিরমিযি হাদিস নং-২৮৩২) অন্যত্র বর্ণিত আছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার ওপর সন্তানের হক।’ (মুসনাদে বাযযার, আলবাহরুয যাখখার, হাদিস নং- ৮৫৪০)

সুন্দর ইসলামি নাম রাখার গুরুত্বের কারণ হলো, হাশরের ময়দানে পূর্বাপর সকল মানুষ একত্রিত হবে এবং ব্যক্তিকে তার নাম ও তার বাবার নামসহ ডাকা হবে। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে ডাকা হবে-অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর (ইসলামি) নাম রাখো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর- ৪৯৪৮)

মানসিকতা ও স্বভাবের ওপরও নামের একটা প্রভাব থাকে। অর্থাৎ (ইসলামি) সুন্দর নাম রাখলে তার মানসিকতা ও স্বভাব উত্তম হয় এবং (অনৈসলামিক) অসুন্দর নাম রাখলে তার মানসিকতা ও স্বভাব হয় রুঢ়। তাই ইসলামি সুন্দর নামের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে যার প্রমাণ মিলে, ‘হজরত আব্দুল হুমাইদ বিন শায়বা (রহ.) বলেন, একদিন আমি হজরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.)-এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজি (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজি (সা.) বললেন-না, তুমি হচ্ছ ‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন)। দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করতে পারব না। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেন, এর ফল এই হলো যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেজাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়েই গেল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৯৩)

এসব দিক বিবেচনা করে শিশুদের ইসলামি সুন্দর নাম রাখার তাকিদে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসকল নাম পছন্দ করতেন এবং যেগুলো রাখতে উৎসাহিত করতেন সে সম্পর্কেও জানা থাকা দরকার। কেমন নাম রাখা উচিত। কোন ধরনের নাম আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন। এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদিসে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নবিগণের নামে নাম রাখো। আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সবচেয়ে সত্য নাম হচ্ছে হারেস (উপার্জনকারী, কাজে নিয়োজিত, কর্মব্যস্ত) এবং হাম্মাম (ইচ্ছাপোষণকারী)। আর সবচেয়ে খারাপ নাম হচ্ছে হারব (যুদ্ধ) এবং মুররাহ (তিক্ত)।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৯৫০)

মোদ্দাকথা, হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জানা যায়, আল্লাহর পছন্দের নাম রাখা উত্তম। পাশাপাশি নবি-রাসুল (আ.), সাহাবায়ে কেরাম এমনকি নেককার-সালেহ বান্দাদের নামে নাম রাখাও সওয়াবের কাজ। অপরদিকে এমন নাম রাখা ঠিক নয় যা আল্লাহর জাতে শরিক হয়, বিকৃত অর্থ বহন করে, বিধর্মীদের নামে মিশ্রিত হয় এবং মূর্তি ও দেব-দেবির নামে হয়। সুতরাং নাম রাখার সময় আমরা যেন অর্থের দিকেও খেয়াল রাখি।

 

লেখক : আলেম, ইসলামি গবেষক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads