শিশুর বমি নিয়ে মা-বাবারা প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এটা তেমন গুরুতর নয়। মায়ের দুধ পর্যাপ্ত না থাকলে দুধ খাওয়ার সময় শিশুর মুখে প্রচুর বাতাস ঢুকে যায়। এই বাতাস পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কিছু দুধ মুখ দিয়ে বের হয়। এই বের হওয়া দুধ, যাকে তুলে দেওয়া বলা হয়। শিশুর বমি একটি স্বাভাবিক বিষয়, এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এটি অতিরিক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জানাচ্ছেন- বেদৌরা বিনতে আফাক
বমির সম্ভাব্য কারণগুলো হলো-
১. শিশুর প্রথম কয়েক মাসে খাওয়ানোর সমস্যার কারণে বমি হতে পারে। যেহেতু এ সময় শিশুর খিদে পেয়েছে কি-না তা বোঝা কষ্টকর, তাই বেশি খাওয়ানো হয়ে যেতে পারে। আরেকটি কারণ হতে পারে, মায়ের দুধের বা ফর্মুলার কোনো প্রোটিনে শিশুর অ্যালার্জি থাকলে।
২. যদি শিশুর পাকস্থলী বা অন্ত্র ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে বমি হতে পারে। শিশুর শ্বাসযন্ত্রে কোনো ইনফেকশন থাকলেও বমি হতে পারে, বিশেষ করে কাশির সময়। এ ছাড়া শিশুর কফ হলে তা পাকস্থলীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কখনো শিশু কফ বের করে দেওয়ার জন্যও বমি করতে পারে। এ ছাড়া শিশুর শারীরিক অসুস্থতায় যেমন ডায়রিয়া, খাবার অরুচি, পেটে ব্যথা এবং জ্বর হলেও শিশু বমি করতে পারে।
৩. অনেক সময় অতিরিক্ত কান্নার কারণে বমি হতে পারে। কান্নার সময় বমির কারণে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না। এতে ভয়ের তেমন কোনো কারণ নেই।
৪. গাড়িতে বা যানবাহনে চড়ার সময়ও শিশু বমি করতে পারে। এটি সাধারণত মোশন সিকনেস থাকলে হয়।
৫. শিশু টক্সিক কিছু খেয়ে থাকলে, যেমন- ওষুধ, পাতা বা কেমিক্যাল, সেক্ষেত্রে বমি হতে পারে। বিষাক্ত খাবার বা পানি খেলেও শিশুরা বমি করে।
৬. নবজাতকের পেটের অন্ত্রে কোনো জন্মগত ত্রুটির কারণে অন্ত্রের পথ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে শিশু দু-তিন সপ্তাহ বয়সে খাওয়ার পরপরই বমি করে দেয়। বমি ছিটকে গিয়ে বেশ দূরে পড়ে এবং বমি করার পরপরই শিশু আবার দুধ খেতে চায়। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবারো একইভাবে বমি করে দেয় এবং শিশুর ওজন কমতে থাকে। একে পাইলোরিক স্টেনোসিস বলে। যদি মনে হয় শিশুর এ ধরনের সমস্যা আছে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারকে জানাতে হবে।
বমি করলে করণীয়
বমির পর শিশুর যাতে পানিশূন্যতা না হয়, তাই তাকে পর্যাপ্ত তরল পান করাতে হবে। বমির সঙ্গে সঙ্গে তাকে খাবার স্যালাইন বা ঘরে তৈরি স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যে পরিমাণ বমি করবে, তার চেয়ে বেশি পানি ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যতবার বমি করবে, ততবার তাকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বমির কারণে শিশুর শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি ও ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়, খাওয়ার স্যালাইনে তা পূরণ হবে।
বমি প্রতিরোধে কী করবেন
শিশুর বমি প্রতিরোধ করতে সবার আগে তাকে জোর করে, অতিরিক্ত পরিমাণে, ঘন ঘন বা অনেক দেরিতে খাবার খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। এছাড়া নবজাতকের ক্ষেত্রে খাওয়ার পর শিশুর ঢেকুর তোলাতে হবে। শিশুর বুকের দুধ খাওয়া শেষ হলে তাকে সোজা করে বেশ কিছুক্ষণ কোলে রাখতে হবে এবং পেটের বাতাস বের করে দিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে। বাচ্চার মোশন সিকনেস থাকলে ভ্রমণের সময় কিছুক্ষণ পরপর বিরতি নিন, যাতে শিশু বিশুদ্ধ বাতাস পায়।
ডাক্তারকে জানাবেন কখন
শিশু যদি ঘন ঘন বমি করতে থাকে, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকের কাছে বমির ধরন ও কারণ ব্যাখ্যা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কোনো দুর্ঘটনার কারণে শিশুর বমি হয়ে থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে শুইয়ে দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। শিশু যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি বমি করে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে।
বমির সঙ্গে যদি রক্ত থাকে
মাঝে মাঝে বমিতে সামান্য রক্ত থাকা স্বাভাবিক। কারণ যে বেগে বমি বেরিয়ে আসে, তাতে খাদ্যনালি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু যদি নিয়মিত রক্ত আসে বা রক্তের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে ডাক্তারকে জানাতে হবে। যদি খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রবল বেগে বমি বেরিয়ে আসে, সেক্ষেত্রেও ডাক্তারকে জানাতে হবে। এটা পাইলোরিক স্টেনোসিসের লক্ষণ হতে পারে।