ফিচার

শিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানের চারুকলা পাঠ

  • প্রকাশিত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

লেখা: ভাস্কর শিল্পী আইভি জামান

পর্ব : আট

শিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানের 

পেইন্টিং বিভাগের : ফাইনাল ইয়ারের সিরিয়াস অবস্থা...ব্রেইনে...অ্যাকসিডেন্ট করে মাথা প্রচণ্ড ফেটে যায় স্কাল টুকরো টুকরো হয়ে চিকিৎসা শেষ করে মেডিকেল থেকে বের হওয়ার ঘটনা।

বাঁ হাতে একটুখানি সমস্যা নিয়ে ভালো হলেন। হসপিটাল থেকে একটা পাগড়ি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলে দিল এই পাগড়িটা সবসময় পরে থাকতে হবে। কারণ এটার ভেতরে তো স্কাল নেই। এটা যদি একটা কিছুর সাথে ধাক্কা লাগে, তো সরাসরি ব্রেইনে চলে যাবে। পাগড়ি টা পরে থাকতে হবে।

এটা সিক্সটি সেভেনের এর কথা। ভালো হওয়ার পর হামিদুজ্জামান পাগড়িটা পরে চারুকলায় হোস্টেলে আসলো...তখন ফাইনাল পরীক্ষার দুই মাস কি তিন মাস বাকি। সিক্সটি সেভেনে পরীক্ষা জুনের দিকে। পরীক্ষার সময়ের হয়ে গেছে তখন। ভাবছে পরীক্ষা দেবে।...অ্যাকসিডেন্ট পরে তাঁর লাইফটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল।

কারণ তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডাক্তার আসিরউদ্দিন উনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিরেক্টর ছিলেন। উনি যথেষ্ট করেছেন। উনার লাইফের সবচাইতে কঠিন পেশেন্ট ছিল হামিদুজ্জামান। উনি ডেকে বলতেন, দাঁড়াও তোমার জন্য কিছু টাকা যোগাড় করছি। উনি অনেকে ডেকে বলতেন ওর একটা ট্রিটমেন্ট দরকার। বিদেশ যেতে হবে, ইংল্যান্ড যেতে হবে, প্লাস্টিক সার্জারি দরকার। উনি এডেনবার্গ হেলথ সার্ভিসের ডাইরেক্টকে হামিদুজ্জামানের প্লাস্টিক সার্জারির ব্যাপার নিয়ে লিখেছেন ।

তখন তিনি জলরং খুব বেশি করতেন, বিক্রি হতো। চিটাগাং ক্লাবে গিয়ে একটা এক্সিবিশনে করেন। অনেকগুলো ছবি মাউন্ট করে টাঙ্গিয়ে দিলেন। সব ছবি সেল, ওদের ক্লাবের যে চিফ...উনারা সব ছবি নিয়ে গেলেন, হামিদুজ্জামানকে অনেক টাকা দিলেন। এই ওয়াটার কালার দিয়েই ট্রিটমেন্ট করলেন। কারণ টাকা তো অনেক লাগবে, ট্রিটমেন্ট কত টাকা লাগবে তা জানেন না। অনেক বেশি টাকা নিয়ে গেলেন, টিকিট জোগাড় হলো। যাওয়ার সময় ফ্রি টিকিট পেলেন।

ফ্রি টিকিট মানে এখান থেকে জাহাজে করে যাবে। ইন্টারেস্টিং। সেই সময় লেগেছে দেড় মাস। এটা হামিদুজ্জামানের লাইফ পরিবর্তন করে দিল। সিলনে ছিলেন দুই দিন। রিনৈ নেমে রেস্টুরেন্টে গেছে সিনেমা-টিনেমা দেখেছে, তারপরে গেলেন আফ্রিকা। ডাকার বলে একটা জায়গা আছে ওখানে গিয়ে তিন দিন জাহাজটি ছিল। তিনি নেমে রেস্টুরেন্টে গেছে চা  খেয়েছে, গল্প করেছে বিভিন্ন জায়গায়  ঘুরেছে, কোনো কাজ ছিল না, ভিসা লাগতো না। তিনি আফ্রিকা খুব ভালো করে ঘুরে ফিরে দেখেছেন। আফ্রিকায় একদিন বসে আছে, একজন ব্যাগে করে অনেকগুলো কার্ভিং নিয়ে আসছে। খুব সুন্দর ব্লাক কাটিং। খুব সুন্দর স্কাল্পচার। মনে হলো মিউজিয়াম পিস। খুব খুশি হলেন। বড় পিস কিনে ও ফেললেন। আস্তে আস্তে স্কাল্পচারের দিকে মোটিভেট হতে শুরু করলেন।

ওই সময় তো স্কাল্পচার ডিপার্টমেন্ট চালু হয়েছে। মোটামুটি আব্দুর রাজ্জাক স্যার  স্কাল্পচার ডিপার্টমেন্ট  শুরু করেছেন। তখন ডিপার্টমেন্টাল একটা সাবজেক্ট শুরু করেছে। মোটামুটি শুরু হয়েছে। আলাদা কোর্স চালু হয়নি।

হামিদুজ্জামান সিক্সটি সেভেনে পরীক্ষা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। ট্রিটমেন্টে তো সময় লাগবেই। সেই জন্য কোর্সটা যদি শেষ না করে...কোনো কিছুই ঠিকমতো হবে না। অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলেন।

মাঝামাঝি পাস করলেন, খুব একটা  ভালো রেজাল্ট হলো না। টিচাররা পরীক্ষা দিতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু উনি ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা সিক্সটি সেভেনে এ দিলেন। কারণ পরীক্ষা না দিয়ে গেলে পরে কোর্সটা শেষ হবে না। একটা ডিগ্রি তো দরকার । তার টিকিটটা ছিল খুব এক্সক্লুসিভ, গেস্টের টিকিট। তাকে রুম দেওয়া হয়েছে শিপের মধ্যে, বসে বসে ছবি আঁকতেন স্কেচ করতেন, দেড় মাস লেগেছে ডান্ডিতে পৌঁছাতে। ডান্ডি থেকে এডেনবার্গ, হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট হওয়ার কথা। ওখানে ট্রিটমেন্ট জন্য গেলেন যেতেই অ্যাডমিশন সব রেডি করা ছিল। যথাসময়ে অ্যাডমিশন নিলেন, ঢোকার সাথে সাথে হিস্ট্রি নেওয়া হলো।

কালকেই তোমার অপারেশন...একদিন পরেই অপারেশন হলো, মানে সার্জারি হয়ে গেল। সার্জারি হওয়ার পরে কিছুটা প্রোবলেম হয়েছিল। এই জন্য ওরা বলল, তুমি দেশে যাবে না। তোমাকে চার থেকে পাঁচ মাস ইংল্যান্ডে থাকতে হবে। আমরা লিখে দিচ্ছি, ভিসার জন্য তোমার অসুবিধা নেই।

হামিদুজ্জামানকে জানিয়ে দিলেন তোমার কোনো প্রোবলেম হলে আর কিছু করার থাকবে না। তোমাদের দেশে তো ট্রিটমেন্ট হবে না। এডেনবার্গ থাকতে হবে না, তুমি একটু দূরেই থাকো কোনো অসুবিধা হলে আমাদের ফোন করবে...আবার হসপিটালে আসতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads