পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দেড় মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। বেলা ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছোট একটি ফেরির মাধ্যমে এ নৌপথে পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ফেরি ছাড়া হয়।
ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেরিটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ঘাটে সফলভাবে পৌঁছাতে পারলে, ফেরি চলাচলের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ও ঘাট সূত্র জানায়, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিচলাচল বন্ধ ছিল। পদ্মায় স্রোত ও পানির উচ্চতা এখন অনেকটা কমে এসেছে। এ কারণে জরুরি সেবা পুনরায় চালুসহ জনদুর্ভোগ রোধে আজ সকাল থেকে পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে পদ্মা নদী পার হতে বাংলাবাজার- শিমুলিয়া নৌপথ ব্যবহার করে। স্বাভাবিক সময়ে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ১৮ থেকে ২০টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে চলাচল করতো। গত জুলাই ও আগস্টে পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এ পরিস্থিতিতে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে গত ১৮ আগস্ট দুপুরের পর এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে যাত্রী পারাপারে একমাত্র ভরসা লঞ্চ। তা–ও ভোর পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ—দুটিই বেশি ব্যয় হচ্ছে।
এদিকে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় সস্তি ফিরেছে ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও এ নৌপথের যাত্রীদের মধ্যে।
ঘাটের ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী আল-আমিন হোসেন বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকতো। তবে এর আগে কখনো এতো সময় ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল না। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলে আমাদের রুজি-রুটিতে প্রভাব পড়ে। বেচা-কিনা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়তে হয়। ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে। ঘাটের মানুষজন আসতে শুরু করেছে। আবারও বেচা-বিক্রি চাঙ্গা হবে বলে ধারণা তার।
বরিশালের কলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন জানান, বাড়িতে যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম ছিল। শিমুলিয়া বাংলাবাজার নৌপথ। এ পথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন প্রয়োজনে মানিকগঞ্জ হয়ে প্রাইভেটকার ভাড়া করে যেতে হয়েছে। এতে করে বেশি সময় লেগেছে। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে। শিমুলিয়া বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলে আবারও কম সময়ের মধ্যে বাড়ি ফেরা যাবে।
শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বেলা পৌনে এগারটার দিকে বলেন, শিমুলিয়া ঘাট থেকে যে ফেরিটি ছেড়ে গেছে আমি নিজেও সে ফেরিতে আছি মোটরসাইকেল। ফেরিতে বারোটি হালকা যানবাহন রয়েছে। আমাদের ফেরি ইতিমধ্যে সেতু এলাকা পার হয়েছে। ফেরিটি সফলভাবে বাংলাবাজার ঘাটে পৌছালে ফেরি চলাচল শুরু হয়ে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, ফেরি চলাচলের খবর ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন আসতে শুরু করেছে। ঘাটের সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, আজ বেলা ১০ টা ৫৫ মিনিটের দিকে ছোট ফেরি কুঞ্জলতা শিমুলিয়া ঘাট থেকে পরীক্ষামুলকভাবে ছেড়ে গেছে। ফেরিটি সফলভাবে মাদারীপুর বাংলা বাজার ঘাটে পৌঁছতে পারলে, পরবর্তীতে ফেরি চলবে কিনা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
