শিমুলিয়া ঘাটে চলছে না স্পিডবোট, বিক্রিও করতে পারছেন না মালিকরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

শিমুলিয়া ঘাটে চলছে না স্পিডবোট, বিক্রিও করতে পারছেন না মালিকরা

  • মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩ জুলাই, ২০২২

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরিয়তপুরের মাঝিকান্দি এবং মাদারিপুরের কাঠালবাড়ি ঘাটে নিয়মিত চলাচল করত ১৫০টি স্পিডবোট। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর শিমুলিয়া ঘাট হতে আর কোনো স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়নি মাঝিকান্দি ও কাঠালবাড়ি ঘটে। সেতু উদ্বোধনের পর সকল যাত্রী সেতু দিয়ে যাওয়ায় শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাটে নদীর ওপারে যাওয়ার লোকজন নেই বললেই চলে । এতে চরম বিপাকে পড়েছে স্পিডবোটের মালিক ও চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় যারা পদ্মা সেতু দেখার জন্য আসেন তাদের ডেকে ডেকে স্পিডবোটে তুলে পদ্মা সেতুর নিচে নিয়ে সেতু দেখান এ সব স্পিডবোট চালকরা। তবে এতে প্রতিদিন একটা দুটা খেপও মিলছে না স্পিডবোট চালকদের। দু-একটি খেপ মিললেও তাতে যা আয় হয় মাত্র ২/৩ শত টাকা। আগে যেখানে আয় হতো ১০০০ টাকা। এই ঘুরতে আসা লোকজন নিয়ে মূলত অলস সময় পার করছেন স্পিডবোট চালকরা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে ও হতাশায়।

সরজমিনে শিমুলিয়া স্পিডবোট এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, সারিবদ্ধভাবে বাধা আছে পঞ্চাশটির বেশি স্পিডবোট। এ সমস্ত স্পিডবোটগুলোর মধ্যে কিছু স্পিডবোটের চালক স্পিডবোট চালাচ্ছেন। তারা ঘাটে দারিয়ে এই পদ্মা সেতু দেখতে চলেন টাকা ১০০ বলে মানুষজনকে ডাকছেন। তবে এতে তেমন সাড়া নেই। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরে হাতেগোনা দু-চারজন মিললে স্পিডবোটে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন পদ্মা সেতু দেখানোর জন্য।

অথচ কিছুদিন আগেও এখানে যাত্রীরা এসে স্পিডবোটে উঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তো । ঘাটের স্পিডবোট চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায় আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি খেপ দেওয়া যেতো। কিন্তু এখন সারাদিনে একটি খেপও পাওয়াও মুশকিল হয়ে পরে । ছুটির দিনে দুই একটি খেপ পাওয়া গেলেও অন্যান্য দিনে খেপ পাওয়াই যায় না। চালকরা বলেন, ঘাটে এসে খেপতো পাওয়াই যায় না খেপের আসায় বসে থেকে চা নাস্তা খেয়ে আরো ৫০/১০০টাকা খরচ হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এই সব স্পিডবোট চালকরা। তাদের স্পিডবোটগুলো কেনার মত লোক পাচ্ছেন না তারা ।

ওই ঘাটের স্পিডবোট চালক ওবায়দুল বলেন, আগে শিমুলিয়া ঘাট হতে কাঠালবাড়ি ও মাঝিকান্দি ঘাটে ১৫০টি স্পিড বোট নিয়মিত চলতো। সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এখন সব বন্ধ। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে আছি। আগে ভাড়ায় স্পিডবোট চালিয়ে নুন্যতম প্রতিদিন ১০০০ টাকা আয় করতে পারতাম । আর এখন দিনে ১০০ টাকাও আয় করতে পারিনা।

অপর স্পিডবোট চালক রাকিব হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাত্র একটা ট্রিপ মারছি। প্রতিদিন ঘাটে আসি ট্রিপের আশায়। এসে ট্রিপতো পাই না উল্টো চা বিস্কুট খেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ করে যাই।

ফেরদৌস নামের ওপর এক চালক, ঘাটে দাঁড়িয়ে ডাকতে ছিলেন, ব্রিজ দেখা ঘুরে আসা ১০০ টাকা বলে । তিনি বলে,ন এখনতো আর কেউ স্পিডবোটে দিয়ে ঘাট পার হয় না। সেতু দেখাতে ঘুরতে নিয়ে যাই। ১০০ করে জনপ্রতি টাকা দেয়। কিন্ত প্রতিদিন ট্রিপ মিলে না।

আরভি নামের স্পিডবোট মালিক ও চালক বলেন, ২০ বছর ধরে স্পিডবোট চালাই আমাদের চারটি স্পিডবোট আছে । ড্রাইভারকে আগে প্রতি টিভে ২৫০ টাকা দিতাম। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটা স্পীডবোট থেকে আগে ১৫০০/২০০০ টাকা পেতাম। এখন একটা চলছে তিনটা বন্ধ। গত চার দিনে মাত্র ১টা ট্রিপ দিছি। এতে মাত্র ৯০০ টাকা পেয়েছি। স্পিডবোটগুলো বিক্রির চেষ্টা করছি। আমার চারটি স্পিড বোডের মধ্যে ৩টির দাম আছে ৮ লাখ টাকা করে অপরটি ১১ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, এখনও অনেক চালকরাই ঘাটে আসে খেপের আশায় । কিন্তু সারাদিন বসে থেকেও খেপ পাওয়া যায়না।

চান মিয়া নামের স্পিডবোটের মালিক ও চালক বলেন,৮ বছর আগে ২ টি স্পিডবোট কিনেছিলাম ১৬ লাখ টাকা দিয়ে। এখনো পুরোপুরি চালান ওঠেনি। চেষ্টা করছি স্পিডবোটগুলো বিক্রি করার জন্য। আড়াই লাখ টাকা করে বলে। সেতু উদ্বোধনের পর একটি ট্রিপও মারতে পারিনি। প্রতিদিন ট্রিপের আশায় এসে চা পানি খেয়ে টাকা খরচ করে যাই।

স্পিডবোট ঘাটের ইজারাদার সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের স্পিডবোটগুলো বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া বিকল্প আর কিছু নাই। বাংলাদেশেতো আর এতোবড় নৌপথ অন্য কোথাও নাই। একদিকে স্পিডবোট চালকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি এর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ বছর করোনার কারণে ৯৮ দিন এবং সেতু উদ্বোধন হওয়ায় মোট ১০৫ দিন আমার নির্ধারিত সময়ে স্পিডবোট বন্ধ ছিলো। সব মিলিয়ে আমি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads