মুক্তমত

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে

  • প্রকাশিত ৩ ডিসেম্বর, ২০২০

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী

 

 

 

দেশে হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া-বিবাদ, অহংকার, অহমিকা, ক্ষমতার দাপট, সর্বত্র আচরণবিধি লঙ্ঘন, বিবেক ও মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি দেখে দেখে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বের দেশে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবার জন্য শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরন্তর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের বাড়বাড়ন্ত থাকলেও এখনো এর বিস্তার তেমন নয়। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং জা দ্রেজের মতে, রাষ্ট্র তার অনুৎপাদন খাতে খরচ কমিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ বেশি করবে এটাই নিয়ম। দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের কাছে আজো সরকারি প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুল-কলেজের গুরুত্ব অনেক। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পেট আগে না মাথা আগে। এই দুয়ের দ্বন্দ্ব এখনো আমাদের সমাজে রয়েছে- শিক্ষা না খাদ্য। দরিদ্র ঘরের শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আগে খাদ্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক। দেশে শিক্ষাব্যয় যেভাবে হু হু করে বাড়ছে, তাতে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে শিক্ষার আগে খাদ্যের গুরুত্ব না হলেও দরিদ্র পড়ুয়াদের মধ্যে এর গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবারে মা যদি শিক্ষিত হয় তাহলে ছেলে-মেয়ে অশিক্ষিত থাকতে পারে না। তবে এ কথাটির কার্যকারিতা এখন তেমন দৃশ্যমান নয়। যেমন প্রচলিত কথা- ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’। এখন উল্টো গরিব বা মধ্যবিত্তের ছেলে-মেয়েদের কষ্ট করে শিক্ষিত হয়ে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন বা বিভিন্ন ক্যাডারের বড় বড় কর্মকর্তা হতে দেখা যায়। আর ধনীর ছেলে-মেয়েরা দেশে ও বিদেশে টাকার জোরে লেখাপড়া করছে ঠিকই; আবার এদের মধ্যে একটি অংশ মাদক ও নেশার দিকে পা বাড়ায় যা কারো কাম্য নয়। বর্তমান সময়ে স্কুল ছুটির পরিমাণ কমিয়ে আনাটাই সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ। সেজন্য বাড়িতে লেখাপড়ার পরিবেশ প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তবে মোবাইল, ফেসবুক, কার্টুন, ইন্টারনেট— এক্ষেত্রে ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীর পড়ালেখার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বোপরি শিক্ষার যে কোনো স্তরে শৃঙ্খলাপরায়ণতা থাকা জরুরি। না হলে শিক্ষা গ্রহণে অনীহা সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা মূল্যবোধ নীতি কাজে লাগাতে হবে। যদিও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার এখনো কাজ করছে। শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার আনাটা অত্যাবশ্যক। যেসব শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি হাতের কাজ শিখতে আগ্রহী, তাদের সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলা খুবই দরকার। দরিদ্রদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বেকারত্ব ও পরনির্ভরশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

আমাদের দেশের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা এখনো নিজের ভাষায় গুছিয়ে লেখা তো দূরের কথা, সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ। ইদানীং শিক্ষা ব্যবস্থায় ফাঁকিবাজি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। স্কুলের পরিবর্তে কোচিং শিক্ষাকে জনপ্রিয় করায় একশ্রেণির শিক্ষকের দৌরাত্ম্য দুঃখজনক। কোচিং বাণিজ্য দূর করতে না পারলে আগামীতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংকট দেখা দেবে। দক্ষ শিক্ষকের সংকটে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলছে যা দেখার কেউ নেই।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারমুখে দাঁড়িয়ে উচ্চশিক্ষার ভিত গঠনে স্কুলশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়াটা একান্তভাবে প্রয়োজন। প্রত্যেক পড়ুয়া যাতে সমান সুযোগ ও পরিবেশ পায়, সে দিকটা সরকারকে দেখতে হবে। তাই যে কোনো মূল্যে এখন থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ, আত্মসম্মান, বিবেক, মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

unescoclubbd@yahoo.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads