আর মাত্র পাঁচ দিন পরই ১৬ ডিসেম্বর। আমাদের মহান বিজয় দিবস। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু করে দিয়েছে বিজয় দিবস উদযাপনের নানা প্রস্তুতি। কিন্তু উদযাপন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছে। দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ এরা। সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে নেবে এরা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শক্তি হিসেবে কাজ করেছে আমাদের তরুণরা। তাই দেশের প্রতি তরুণদের উদ্যোগী হওয়া খুব জরুরি। তরুণ সমাজকে হতে হবে সচেতন, উদ্যমী ও সাহসী। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিজয় দিবস নিয়ে তাদের ভাবনা ও মতামতের বিস্তারিত জানাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম
সাদমান সাকিব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাদমান সাকিব। বিজয় দিবস এবং বাংলাদেশ নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর স্বাধীন দেশগুলোতে স্বাধীনতা দিবস আছে। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা দিবস অন্যদের থেকে আলাদা। কারণ ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয় দিবস থাকার ঘটনা বিরল। একটা সময় ছিল যখন বিজয় দিবস মানে ছিল শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ। মুক্ত বাতাসে পতাকা ওড়ানো। লাল-সবুজকে সম্মান জানিয়ে কাগজের পতাকা দিয়ে বাড়ির ছাদ আর রাস্তা সাজানো। বিজয়ের ৪৭ বছরে এসে আরো কিছু নতুনত্ব যোগ হয়েছে। শুধু বাড়ির ছাদ কিংবা সামনের রাস্তাই নয়, নিজেকেও সাজিয়ে নিতে হবে লাল-সবুজ দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের লাল-সবুজের কম্বিনেশনের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট পরে বিজয় দিবস উদযাপন করব।
অনিমেষ রায়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিমেষ রায়। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটির বেশি। যার মধ্যে তরুণের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। কিন্তু দেশের তরুণদের বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক কম। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমের পরিবেশনাতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। দেশের বিভিন্ন উৎসবে বেসরকারি টেলিভিশনগুলো নানা আঙ্গিকের পরিবেশনা করে থাকে। কিন্তু বিজয় দিবসে তার প্রকাশ অনেকটাই হতাশাজনক। মাত্র দুয়েকটা মুক্তিযুুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র কিংবা গভীর রাতে দুয়েকটা টকশো আলোচনা। আর পত্রপত্রিকায় হাজারখানেক শব্দ ছাপানো। এমনটা হলে তা খুবই হতাশাজনক। বরং আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের সঠিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ; সবকিছুর চিত্র তুলে ধরার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে এ গণমাধ্যম। স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশতাব্দী অতিবাহিত হতে চলেছে, অথচ আমরা কি পেরেছি স্বাধীনতা উপভোগ করতে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে?
সৌরভ দাস
দেশের জন্য সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারনাশন্যাল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ দাস বলেন, বিজয় দিবস বলতে একটা সময় ঈদ-পূজার মতোই উৎসব বোঝাত। ঘরে ঘরে যেন আনন্দ উৎসব। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিজয় দিবস অনেকটা মেকি উদযাপনের মতো। দিনে দিনে আরো হারাচ্ছে তার নিজস্বতা। আগে গ্রাম কিংবা মফস্বল শহরগুলোতে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি কিংবা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি আয়োজন অনেক কমে গেছে। আমি মনে করি, এর পেছনে বিজয় দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এখনকার বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানাচ্ছেন না। অনেকটা বলা চলে, নিজেরাই জানছেন না।
অনিক মাহমুদ
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক মাহমুদ। বিজয় দিবসের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি জানান, বিজয় দিবস নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফসল এ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। ইতিহাস পড়ে, সিনেমা দেখে, দাদা-বাবার মুখ থেকে গল্প শুনে জেনেছি। তবে সাবধান। ইতিহাস জানার সময় সতর্ক থাকতে হবে। ভুল ইতিহাস কখনো চর্চা করা যাবে না। শুধু বিজয় দিবসের দিনটি নয়, দেশকে ভালোবাসতে হবে সবসময়। আমাদের অঙ্গীকার ও প্রত্যয় হোক, দেশের স্বেচ্ছাসেবক হয়ে দেশের জন্য কাজ করে নতুন প্রজন্মকে একটা শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার।
ফারিয়া কান্তা
ঢাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া কান্তা জানান, বিজয় দিবস উদযাপন প্রস্তুতিতে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই মেয়েরা। বিজয় দিবসে লাল-সবুজের শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন মাটি অথবা কাঠের গহনা পরব। কারণ এসব আমাদের বিজয় দিবসকে চিত্রিত করে। কিন্তু আমাদের এই আদিখ্যেতা শুধু এক দিনের জন্যই। অনেকে তো মনে করে বিজয় দিবসে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলেই দায়িত্ব শেষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সঠিক তথ্য তরুণ প্রজন্মের কাছে জাগিয়ে বাখার জন্য কিছু নতুনত্ব করতে হবে সরকারকে। শুধু ১৬ ডিসেম্বরে আবদ্ধ না থেকে জীবনের সকল কাজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারলে আগামীতে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
সানজেনা আফরিন মৌ
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজেনা আফরিন মৌ। তিনি বলেন, আমাদের সবার উচিত দেশের ইতিহাস জানা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে আরো বেশি করে জানানো। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবনের বিনিময়ে এবং যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড উপহার দিয়েছেন তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে এখনো অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা এসকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তাই আমি বলব নতুন করে একটি পদক্ষেপ নিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যেসকল বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।