শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

* ক্লাসের সংখ্যা থাকছে সীমিত * পঞ্চম, দশম, দ্বাদশে প্রতিদিন ক্লাস

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

করোনা মহামারির দাপটে দীর্ঘ ১৭ মাস পর আজ রোববার থেকে চালু হলো দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকার নির্দেশিত বিধি মেনে আবারো ক্লাসে ফিরেছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইছে উৎসবের আমেজ। তবে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও ক্লাসের সংখ্যা সীমিতই থাকছে।

আপাতত শুরুতে সব শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হচ্ছে না। শুধু পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। 

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি ‘অনুকূলে’ না আসায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এই বৈঠকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, সংক্রমণের হার কমে যাচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় স্কুল-কলেজে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এর আগে শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেকও জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। আর অন্য শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাসে যেতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে সশরীর ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্পন্ন কার্যপ্রণালি বিধি (এসওপি) ঠিক করে দিয়েছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য মোট ৬৩টি নির্দেশনা রয়েছে।

নির্দেশনায় অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো, সন্তানকে মাস্ক পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) সচেতন করা, প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে পাঠানো ও বাসায় আসা নিশ্চিত করা, সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানো, প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং স্কুলে যাওয়ার সময় পানি ছাড়া অন্য কোনো খাবার সন্তানের কাছে না দেওয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করা।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে পাঠদান নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রুটিন তৈরি করতে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

রুটিন তৈরির ১১ নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একদিন প্রতিষ্ঠানে আসবে। সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ২টি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করবে। রুটিনের সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাস নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান ওই সব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন করবে।

এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ডিগ্রি, সম্মান ও মাস্টার্স পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ ও ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রুটিন প্রণয়ন করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। রুটিন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা না ঘটে। রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপাতত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস রুটিন তৈরির ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব স্কুল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সেসব স্কুল আজ থেকে (১২ সেপ্টেম্বর) খোলার বাধ্যবাধকতা নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। বছরের শেষভাগে এসএসসি ও এইচএসসির পাশাপাশি পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিস এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা বন্ধ ছিল না। টেলিভিশনও অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা চালানো হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা উপসর্গ থাকলে তাদের বিদ্যালয়ে না পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads