কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ এলাকার আঃ হান্নানের ছেলে আনোয়ার হোসেন রব শিক্ষাকতার পাশপাশি মধু চাষসহ বিভিন্ন আবাদী চাষ করে থাকেন। তার মধু সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনে পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বছরে ২ দেশে মধু পাঠাবে বলে জানান।
আনেয়ার হোসেন রব জানান, সাইকেলে দুটি বালতি, একটি ছুরি আর পেছনে এক আঁটি ধানের খড় বা হলুদের শুকনো পাতা নিয়ে চলতে দেখা যায় মধু সংগ্রহকারীদের। ধোঁয়া সৃষ্টি করে মৌচাক থেকে প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করেন তারা। তবে বর্তমানে প্রাকৃতিক মধুর চেয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ অনেক বেশি লাভজনক। সেদিক বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে মধু খামার করেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সজিব আল মারুফ এর সহযোগিতায় প্রথমে ট্রেনিং নিয়ে থাকি। এর পর শুরু হয় মধু চাষে কার্যক্রম। মধুর বাক্স নিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করেন। এখন তার খামারে প্রায় শতাধিক মধুর বাক্স রয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ধারণা ও দূরদৃষ্টি, অধ্যাবসায় আর পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছি।
ক্ষুদ্র পরিসরে মধু চাষ শুরু করি। সরিষা, কালোজিরা, লিচুসহ বিভিন্ন শস্য ও ফলের মৌসুমে তিনি এসব মৌ-বাক্স পেতে রাখেন। সাফল্য পেয়ে এখন কুষ্টিয়াসহ পাশ্ববর্তী জেলার এলাকায় গড়ে তুলেছেন মৌ-খামার। তার খামারে কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেক বেকার তরুণের। মধু খামার থেকে বছরে উৎপাদিত মধু দেশের বাজারের পাশাপাশি রপ্তানি করা হবে বিদেশেও। সরকারী সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মধু খামারকে দেশের বৃহৎ মৌ-কোম্পানিতে রূপান্তরের আশা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির। কীটনাশক ব্যবহারসহ নানা কারণে ইদানীং মৌমাছি কমে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে দেশের কৃষি। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় মধু চাষ, মৌমাছির বংশ বিস্তার ও পরাগায়ন ঘটিয়ে কৃষিতে ফলন বাড়াবে বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। দেশে পুষ্টিঘাটতি পূরণে, মধুর ব্যবহার বাড়াতে সরকারের ব্যাপক প্রচারাভিযান দরকার বলে মনে করেন। এতে মধুর সাথে যেমন বাড়বে শস্য উৎপাদন, তেমনি কৃষি হয়ে উঠবে আরো লাভজনক। “নিজে কিছু করার চেষ্টা এবং অন্য মানুষদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতেই আমার এ পথচলা। আমার খামারে উৎপাদিত মধু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হয়ে থাকে। কুষ্টিয়ার খোকসায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ চলছে। এ বছর শতাধিক বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছি।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের ফলে একদিকে ফলন বাড়ছে এবং মধু সংগ্রহের ফলে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। এ উপজেলার একজন মডেল মৌ-খামারি। মধু চাষ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সজিব আল মারুফ বলেন, আনোয়ার হোসেন রব খুবই পরিশ্রমী। সে শিক্ষাকতার পাশপাশি মধু চাষসহ বিভিন্ন আবাদী চাষ করে থাকে। তার আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। মধু চাষ করে এক সময় সাফল্য বয়ে আনবে। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা চাইলে তাকে দেওয়া হবে।