শসা চাষে কৃষকের হাসি

ছবি: বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

শসা চাষে কৃষকের হাসি

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় দেশীয় পদ্ধতিতে শসা চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন কৃষক মো. মোস্তাকিম সরকার। বর্তমান বাজারে শসার দাম ভালো পাওয়ায় তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
কৃষক মো.মোস্তাকিম সরকার উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুরপহেলা গ্রামের বাসিন্দা। গত ২ বছর ধরে তিনি জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ, ক্যাপসিকাম, সিমলা, শসা, টমেটো, ঢেঁড়স, লাউ, বেগুনসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করে আসছেন। এরইমধ্যে তিনি শসা চাষ করে বাজিমাত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আদমপুর গ্রামে মায়ের দোয়া বহুমূখী কৃষি প্রকল্প নামে সে একটি কৃষি খামার গড়ে তুলেন। ওই খামারে তিনি মৌসুম অনুযায়ী নানা প্রকার সবজি চাষ করছেন। বর্তমানে তার জমির পরিমাণ রয়েছে ১২ বিঘার উপর। শুধু ৪ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেন । চারা রোপনের ৪৫ দিনের মাথায় ফলন আসে। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে শসা বিক্রি শুরু করেছেন। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে যাবতীয় খরচ বাদে শসা থেকে দেড় লাখ টাকার উপর তাদের আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায়।

ইতিমধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক লোকজন তার শসা ক্ষেত দেখতে এবং এ সম্পর্কে জানতে ভিড় করছেন। দেখতে এসে অনুপ্রাণিত হচ্ছে অনেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উন্নত মানের বীজ ও দক্ষতার সাথে পরিচর্যার কারনেই বাম্পার ফলন হয়েছে।

সরেজমিনে আদমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি গাছে গাছে প্রচুর শসা ধরেছে। যে দিকে দৃষ্টি যায় শসা আর শসা চোখে পড়ছে। রাস্তার পাশে কৃষি প্রকল্প হওয়ায় আগত ছোট বড় সবার নজর কাড়ছে। এরই মধ্যে শসা বিক্রি শুরু হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শসার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে দেহের পানিশূন্যতা দূর করে, দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষন করে, বিষাক্ততা দুর করে, প্রত্যাহিক ভিটামিনের শুন্যতা পূরণ করে, ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারী, হজম ও ওজন হ্রাসের সহায়ক হয়, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে, ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, মুখ পরিস্কার রাখে গেঁটে বাদ থেকে মুক্ত রাখাসহ নানা প্রকার শরীরের উপকার করে।

কৃষক মো. মোস্তাকিম সরকার জানায়, ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় পদ্ধতিতে ৪ বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ হাজার শসার চারা রোপন করেন। সেচ, বীজ, চারা রোপন, জমি ইজারা, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। চারা রোপনের পর থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় ৪৫ দিনের মধ্যে ফলন তোলা শুরু হয়ে যায় বলে জানায়। দৈনিক ৬ মণ থেকে ৭ মণ শসা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ শসা ১হাজার থেকে ১১শটাকায় দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার উপর শসা বিক্রি করেছেন বলে জানায়। তবে দিন দিন বাজারে শসার দাম বাড়ছে। তিনি আশা করছেন, বাজার দর ভালো থাকলেও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেড় লাখ টাকার উপর আয় হবে।

তিনি আরো বলেন, এই মাটিতে সবজি চাষ নিয়ে শুরুতে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক পরামর্শে ও নিজেদের সঠিক পরিচর্যায় উৎপাদনে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। তাছাড়া বিশাল জায়গায় তিনি তরমুজ, সাম্মাম, টমেটো, শসাসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় শসা চাষ বেশী লাভ জনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ চাষ। ফলন ভাল করতে সার্বিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে শসাসহ সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা লাভ করায় তিনি এখন এলাকায় একজন সফল ও আদর্শ কৃষক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বর্তমানে স্ত্রী ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে সুখ শান্তিতেই দিনানিপাত করছেন।

পাইকার মো. আল-আমিন বলেন, এখানের শসা মানে ভালো হওয়ায় বিক্রিতে ও ভালো লাভ হচ্ছে। তাই অনেক দিন ধরে এখান থেকে শসা নিয়ে তিনি বিক্রি করছি। 

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বারো মাসেই নানা প্রকার সবজি আবাদ করছে কৃষকরা। ফলন বাড়াতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। আদমপুর এলাকায় নানা প্রকার সবজি আবাদ করে সত্যিই কৃষক মোস্তাকিম সরকার চমক সৃষ্টি করে একজন আদর্শ কৃষকে পরিণত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ উপজেলায় শসার ফলন ভালো হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে শসাসহ অন্যান্য সবজির দাম ভালো থাকায় এ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads