নির্বাচন

শঙ্কার নগরে শান্তিপূর্ণ ভোট

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি, ২০২২

শঙ্কা থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনি শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ভোটে সবজায়গায় ছিল উৎসবের আমেজ। শুরুতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়েছে। ভোটের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও ভোটাররা।

ভোট দিতে আসা আশরাফ আলী বলেন, পারিবারিক কাজ থাকায় তিনি সকালেই ভোট দিতে এসেছেন। ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  কেউ কোনো সমস্যা করেনি। মনে আশঙ্কা থাকলেও পরিবেশ দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

হালিমা বেগম নামের এক নারী ভোটার বলেন, ইভিএমে ভোট হওয়ার কারণে প্রথমে ভেবেছিলাম সমস্যা হবে। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে ভালোভাবেই ভোট দেওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটে কোনো ধরনের কেউ বাধা বা ভয়ভীতি দেখায়নি। যোগ্য প্রার্থী দেখেই তিনি ভোট দিয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় নতুন ভোটার আবির হোসেন বলেন, জীবনের প্রথম ভোট দিতে পেরে তিনি খুশি। ইভিএমে ভোটের ব্যাপারে সংশয় থাকলেও কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্টভাবে ভোট দিতে পারায় তিনি খুশি।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেলা যত বেড়েছে উপস্থিতি বেড়েছে। ভোটারদের মধ্যে পূর্বে একটি সংশয় থাকলেও ভোটের দিন সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতি চোখে পড়েনি। আশঙ্কার বদলে উৎসবের পরিবেশই ছিল সবখানে।  

তবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও ভোটগ্রহণে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। এর জন্য ইভিএমকে দায়ী করছেন ভোটাররা। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। তবে নতুন ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের অ্যাজেন্ট ছিল। নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি। ভোটগ্রহণ নিয়ে কোনো মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থী লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি।

শেষ বেলায় বিকাল পৌনে চারটার দিকে ভোট দিতে এসে একই কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এক এম শামীম ওসমান। আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

এবার সিটি নির্বাচনের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন ভোটার। মোট ভোটকেন্দ্র ১৮৭টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩০১টি। এর মধ্যে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র ছিল ২৫টি।

এবার নির্বাচনে মোট ৭টি দল অংশগ্রহণ করেছে। মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন ৭ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।

এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি টিম ছিল; যার প্রতিটি টিমে ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ সদস্য ও ২০ থেকে ২২ জন আনসার সদস্য। এর বাইরে বিজিবির টহলও ছিল। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবির টহল ছিল চোখে পড়ার মতো।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিদায়লগ্নে একটি ভালো নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ‘আদর্শ স্কুল, নারায়ণগঞ্জ’ কেন্দ্র পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এসময় প্রার্থীদের অ্যাজেন্টদের কাছে মাহবুব তালুকদার তাদের কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চান। জবাবে অ্যাজেন্টরা ইভিএমসহ ভোটের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই বলে জানান।

পরে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছেও ইভিএমে সমস্যা আছে কি না, কারও কোনো অভিযোগ আছে কি না এবং ভোট কেমন হচ্ছে, এসব বিষয়ে জানতে চান এ নির্বাচন কমিশনার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট কেমন হচ্ছে এ ব্যাপারে কোনো কথা আমি এখন বলবো না। সময়টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটের কোনো কিছু আমি বলতে পারি না, বলবো ভোটের টাইমটা উত্তীর্ণ হওয়ার পর। ভোট যত বেশি কাস্ট হবে আমি তত খুশি। আমাদের বিদায়লগ্নে একটি ভালো নির্বাচন দেখতে চাই। যার জন্য আমি এখানে এসেছি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে আমার চেয়ে সাংবাদিকরা ভালো জানেন। আমি তো একদিন এসেছি, গণমাধ্যমকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এটা দেখছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে আপনারা (মিডিয়া) জানান। আমি এখন যদি কিছু বলি সেটা খণ্ডচিত্র হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads