মঙ্গল গ্রহের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নতুন রোবটযান ‘ইনসাইট’। বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১টা ৫৩ মিনিটে যানটি লাল গ্রহের মাটি স্পর্শ করে। কম্পনের তথ্য ও তাপমাত্রা থেকে মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো বিষয়ে ধারণা পেতেই রোবটটি পাঠিয়েছে নাসা। দীর্ঘ সাত মাসের যাত্রা শেষে সফল অবতরণের পরপরই মনুষ্যবিহীন যানটি ছবি ও তথ্য পাঠানো শুরু করেছে বলে জানিয়েছে নাসা। সেই ছবি পেয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রোপালশান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) বিজ্ঞানীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এ সফলতায় বিজ্ঞানীদের ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময়ও এর গতি ছিল বুলেটের চেয়ে বেশি। মূল চ্যালেঞ্জটা ছিল সেই গতি কমিয়ে মঙ্গলপৃষ্ঠে নিরাপদে অবতরণ করা। তবে একটি তাপনিরোধক যন্ত্র, প্যারাসুট আর রকেটের সহায়তায় সাত মিনিটের সেই চ্যালেঞ্জ উতরে যায় ইনসাইট।
নাসার প্রধান প্রশাসক জেমস ব্রিডেনস্টাইন ইনসাইটের সফল অবতরণকে অভূতপূর্ব হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানব ইতিহাসে আজকের দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা মানব ইতিহাসে অষ্টমবারের মতো সফলভাবে মঙ্গলে অবতরণ করেছি।
তার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, রোবটটি এখন মঙ্গলের সমতল একটি অঞ্চলে অবস্থান করছে। গ্রহটির নিরক্ষরেখার কাছের ওই এলাকাটির নাম দেওয়া হয়েছে এলিসিয়াম প্ল্যানেসিয়া। সেখান থেকেই মঙ্গলে কম্পনের মাত্রা, প্রাণধারণের উপযুক্ততা যাচাই, পাথরের স্তর তৈরির রহস্য উদ্ঘাটন করেবে ইনসাইট।
নাসা জানিয়েছে, রোবটে থাকা ফরাসি-ব্রিটিশ সিসমোমিটার মঙ্গলের কম্পনের তথ্য পাঠাবে। এর মাধ্যমে লাল গ্রহটির কেন্দ্র্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া গ্রহটি নিজের অক্ষের চারপাশে কীভাবে কম্পিত হয়, তা জানতে ইনসাইটের রোবটটিতে আছে রেডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেমও।
এ বিষয়ে নাসার ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট সুজানে স্ম্রেকার বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা জানি না, মঙ্গলের কেন্দ্র্র কি তরল, না কঠিন কিছু দিয়ে তৈরি। জানি না এটি কত বড়। ইনসাইট আমাদের এসব তথ্য জানাবে।
গ্রহটির সক্রিয়তা বোঝার লক্ষ্যে তার মাটিও খুঁড়তে রোবটের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ৫ মিটার পর্যন্ত খননে পারদর্শী একটি যন্ত্রও। এইচপি থ্রি নামের এ যন্ত্রটি তৈরি করেছে জার্মান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই এইচপি থ্রি যন্ত্র মঙ্গলের পাথরের স্তরে তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং তেজষ্ক্রিয়তা পরিমাপ করবে। আর মঙ্গলে তরল পদার্থের অস্তিত্ব পরীক্ষা করবে রাইস নামের অপর একটি যন্ত্র।
প্রায় ৯৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ইনসাইটের চলতি বছরের ৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ এয়ার ফোর্স ঘাঁটি থেকে মঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করে। তখন থেকে মঙ্গলে পৌঁছাতে নাসার এই মহাকাশ যান পাড়ি দিয়েছে ৩০ কোটি ১২ লাখ ২৩ হাজার ৯৮১ মাইল পথ। মঙ্গলের এই মহাকাশ যানের গতি ছিল ঘণ্টায় ৬ হাজার ২০০ মাইল।