বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৮তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবস উপলক্ষে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন উৎসব। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির বারামখানার আখড়াবাড়িতে বসছে সাধুরহাট। আখড়াবাড়ি হবে সাধু-গুরু-বাউলদের পদচারণায় মুখর। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমি তিরোধান দিবসের আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে।
লালন সাঁইজির মুক্তমঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যও। সেই সঙ্গে সাঁইজির মাজার প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যেই দূর-দূরান্ত থেকে সাধু-ভক্তরা এসে আসর গাড়তে শুরু করেছে সাঁইজির আখড়াবাড়িতে। গত রোববার সাঁইজির আখড়াবাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অনেক সাধু-ভক্তরা চলে এসেছেন। তারা বলেন, আত্মার টানে, আত্মার শুদ্ধির জন্য এসেছেন।
লালন উৎসবকে মুখরিত করতে ইতোমধ্যে খুঁটি গেড়েছে লালন মুক্তমঞ্চের সামনে কালী নদীর তীরে। মেহেরপুর থেকে গতকাল সকালে এসেছেন ফকির দাউদ হোসেন। তিনি জানান, সাঁইজির তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমরা এখানে এসেছি। এখানে এলে আমাদের ভালো লাগে, মনের খোরাক মেলে। সাঁইজির বাণীগুলো কানে ভাসে। তাই আগে-ভাগেই চলে এসেছি।
ছেঁউড়িয়া লালন মাজারের খাদেম মহম্মদ আলী শাহ জানান, ১২৯৭ বাংলা সনের ১ কার্তিক, ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর এই আধ্যাত্মিক বাউল সাধক লালন শাহের মৃত্যু হয়। তার তিরোধান দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ভক্তরা এ উৎসব পালন করতে সমবেত হয়ে থাকে। এ সময় আখড়াবাড়ি দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখ প্রাণের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে।
লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, ফকির লালন শাহ’র ১২৮তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে এবার ৩ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্যান্ডেলের কাজ কিছু বাকি আছে সেটাও হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এবার লালন মেলায়/উৎসবে নিরাপত্তার জন্য ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, গোয়ন্দো পুলিশ, আনসার সদস্য এবং লালন একাডেমির স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। প্রতিবছরের মতো এবারো লালনভক্তদের জন্য বিকালে অধিবাস, সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা ব্যবস্থা রয়েছে।
মেলায় নানা রকম গৃহসামগ্রী, কাঠের তৈরি সাংসারিক নানা জিনিসপত্র, গরম জিলাপি, পাঁপড় ভাজা, লালনের গানের সিডি, গেঞ্জি, শনপাপড়ি, আখের শরবত, হোটেল, খই-বাতাসাসহ হরেক রকম পসরা বসে।