রুপির দরপতনের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা

প্রতীকী ছবি

পণ্যবাজার

রুপির দরপতনের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা

রুপির দরপতনের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা

  • নাজমুন নাহার মনি
  • প্রকাশিত ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

রেকর্ড দরপতনে রুপির মূল্যমান এখন প্রায় টাকার সমপর্যায়ে। গেল সপ্তাহে ১০০ রুপির বিনিময় মূল্য ছিল মাত্র ১১৩ টাকা। যা একটি রেকর্ড। পাশাপাশি যেভাবে রুপি মান হারাচ্ছে, সেই তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে টাকা। ফলে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ কম পড়ছে, কিন্তু এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। বিপুল লাভের টাকা চলে যাচ্ছে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের পকেটে।

ভারতে রুপির এ দরপতন হুট করে হয়নি। শুধু ২০১৮ সালের প্রথম থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুপি প্রায় ১৭ শতাংশ দর হারিয়েছে। পাশাপাশি টাকার বিপরীতেও ভারতীয় মুদ্রার অবস্থা বেশ দুর্বল। এখন ১ টাকা ১৩ পয়সায় মিলছে এক রুপি। কয়েক মাস আগেও এক রুপি কিনতে খরচ হতো ১ টাকা ৩০ পয়সার বেশি।

বাংলাদেশের বাজারে এখন বিক্রীত অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যই সম্প্রতি আমদানি করা। এর মধ্যে মোটরবাইক, গাড়ি, যন্ত্রাংশ, প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক, খাদ্যসহ শতাধিক পণ্য বাংলাদেশের বাজার দখল করে রয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে রুপির দরপতনের কারণে কোনো পণ্যের দাম কমানোর তথ্য নেই। 

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি ডলারের হিসাবে হয়। তবে ডলারের বিপরীতে রুপির মানও অনেক কমে গেছে। সে তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। এতে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ কম হচ্ছে।

কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই কেন- এ পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পণ্যমূল্য কমে ধীরে ধীরে; আর বাড়ে ঝড়ের গতিতে’- এ নীতিই প্রচলিত বাংলাদেশের বাজারে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে এ গবেষণা পরিচালক বলেন, কতিপয় আমদানিকারক এসব পণ্যের বাজার দখল করে রয়েছে। আর বিকল্প কোনো দেশের পণ্যের আধিপত্য নেই এই বাজারে। ফলে ব্যবসায়ীরা লাভের টাকাটা নিজেদের পকেটেই ভরছেন আর ভোক্তারা ঠকছেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে তখনই উপকার পাওয়া যাবে, যখন একক আধিপত্য ভেঙে দেওয়া যাবে।

যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যটা ডলারে হয় বলেই রুপির দাম পতনের প্রভাবটা সীমিত হচ্ছে। দ্রুত এর সুফল বোঝা যাবে না। কারণ দুই দেশের আমদানি-রফতানির কার্যক্রম শুরু হয় অনেক আগে থেকে। অধিকাংশ পণ্য আমদানি হয় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে। ফলে সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।

ভারতের গণমাধ্যমগুলোর তথ্য মতে, দেশটির শেষ অর্থবছরে (২০১৮) ভারত বাংলাদেশে প্রায় ৮শ’ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। বর্তমানে ভারতের মোটরসাইকেলের সবচেয়ে বড় বাজার বাংলাদেশ। ২০১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে ২২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মোটরসাইকেল রফতানি করেছে দেশটি। পাশাপাশি ভারতীয় গাড়ি ও ট্রাকের অন্যতম বাজার বাংলাদেশ। দেশটি বাংলাদেশে ২৩ কোটি ডলারের ট্রাক রফতানি করেছে। রুপির দরপতনের সুবিধা ভোক্তারা কেন পাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোটরবাইক আমদানিকারক টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিপ্লব কুমার রায় বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের রফতানিকারক ও আমদানিকারক উভয়েই ফরওয়ার্ড হেজিংয়ের (আর্থিক সম্পদের ঝুঁকি কমাতে ব্যবহূত চুক্তি) মাধ্যমে ব্যবসা করে। অর্থাৎ মুদ্রার মূল্য দীর্ঘসময়ের জন্য আগেভাগে নির্ধারিত হয়ে থাকে। ফলে হঠাৎ করেই মুদ্রার অবমূল্যায়নের সুফল খুব একটা মেলে না। এ ধরনের চুক্তির কারণে টিভিএসও তেমন সুফল পাচ্ছে না।

তবে তিনি বলেন, যেহেতু মোটরবাইকের বাজার এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক; ফলে দাম কমানোর কথা যে ওঠেনি, তা ঠিক নয়। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে, দাম কমতেও পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতে রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় রুপির দরপতনে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় ভারত রফতানি সক্ষমতায় এগিয়ে যাবে। দীর্ঘ মেয়াদে যা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯শ’ কোটি ডলার। এর মধ্যে আমদানি হয়েছে ৮৬১ কোটি ডলারের পণ্য। বিপরীতে রফতানি হয়েছে মাত্র ৮৭ কোটি ডলারের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads