রাজনীতিও এখন গরিবের বউয়ের মতো

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

রাজনীতিও এখন গরিবের বউয়ের মতো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৭ অক্টোবর, ২০১৮

সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ প্রসঙ্গে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।

গতকাল শনিবারের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এখন গরিবের ভাউজ। আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ (ভাবি)। রাজনীতিও হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। যে কেউ যেকোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, বাধা নাই।’ এ অবস্থাকে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের পথে বাধা মনে করে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেও চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ দেন ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ঢাবি আচার্য আবদুল হামিদ।

লিখিত বক্তব্যের বাইরে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার টানে দেওয়া তার হাস্যরসাত্মক বক্তব্যে হাসিতে ফেটে পড়েন সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরাও। তিনি বলেন, ‘আমি যদি বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিকসের লেকচারার হইতাম চাই, নিশ্চয়ই ভিসি সাহেব আমারে নেবেন না। বা কোনো হাসপাতালে গিয়া বলি, এত দিন রাজনীতি করছি, হাসপাতালে ডাক্তারি করতে দেন। বোঝেন অবস্থাটা কী হবে? এগুলো বললে হাসির পাত্র হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। যদি বলি এত বছর রাজনীতি করছি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদ দিতে পার। সেখানে আমাকে দিবে? কিন্তু রাজনীতি গরিবের ভাউজ।’

ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘সবাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, ডাক্তারি পড়ি, ভিসি সাহেবও অবসরের পর রাজনীতি করবেন। যারা সরকারি চাকরি করেন, জজ সাহেব যারা আছেন ৬৭ বছর চাকরি করবেন। রিটায়ারের পর বলবেন, ‘আমিও রাজনীতিবিদ’। আর্মির জেনারেল হওয়া, সেনাপ্রধান হওয়া, সরকারি সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, কেবিনেট সেক্রেটারি রিটায়ার কইরা বলেন, ‘আমি রাজনীতি করব।’ কোনো রাখঢাক নাই। যার ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা তখনই রাজনীতিতে ঢোকে।

তিনি বলেন, ‘চাকরি না করে সরাসরি রাজনীতিতেই ঢুকে পড়েন। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে পাস করে সরাসরি রাজনীতিতে আসেন। বিসিএস পাস করে রাজনীতিতে আসেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন ডিআইজি, আইজিরাও রাজনীতি করবেন। মনে মনে কই, রাজনীতি করার সময় এই পুলিশ তোমার বাহিনী দিয়ে পাছার মধ্যে বাড়ি দিছো। তুমি আবার আমার লগে আইছো রাজনীতি করতে। কই যামু।’

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির শিক্ষা নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি সরকারি দল, বিরোধী দল সবাইকে বলছি, যারা ছোট থেকে রাজনীতি করে আসছে শুধু তারাই থাকুক। এক্সপার্টের প্রয়োজন আছে। তারা বিশেষজ্ঞ হিসেবেই আসুক। এক্সপারটাইজ হিসেবে তাদের মতামত নেন। তাদের কমিটি করে দেন, উপদেষ্টা করে দেন। ডাইরেক্ট রাজনীতির মধ্যে আইসা তারা ইলেকশন করবে, মন্ত্রী হয়ে যাবে- এটা যেন কেমন কেমন লাগে। যার জন্যেই আমার মনে হয় আমাদের দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না।’

এ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নেতৃত্ব ছাত্রসমাজ থেকেই গড়ে উঠতে হবে। এরই বাইরে যে ধারা চলছে, তা থামাতে হবে। সমস্ত ছাত্রসমাজকে সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এই যে রাজনীতিবিদদের সমস্যা এই সমস্যার কারণও এটা। বিজনেসম্যানরা তো আছেই, শিল্পপতি-ভগ্নিপতিদের আগমন এভাবে হয়ে যায়। এগুলো থামানো দরকার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আশার আলো দেখছি। ছাত্রসমাজকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই। যখন তফসিল হয়, দেখা যাবে অনেক ক্যালকুলেশন হবে। ভেজাল সৃষ্টি করে দিতে পারে। কিন্তু সমস্ত ছেলেমেয়েকে বঞ্চিত করা উচিত না। এ ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে। যাতে কোনোভাবে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত না হয়। যারা ব্যক্তি বা অন্য স্বার্থ দেখতে চায়, এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফলও নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, কলেজে পড়ার সময় আমরা প্রেমপত্র লিখছি। ভালো কোটেশন কীভাবে চিঠিতে দিলে সুন্দর হবে...। এখন তো চিঠি লেখাই একেবারে নাই। এখন তো মেসেজ পাঠায়। ইংরেজিতে বাংলা লেখে। কী লেখে? ফেইসবুক-টেইসবুক এসব আমি বুঝি না। আমি ব্যাকডেটেড।’

এ নিয়ে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে প্রেমপত্রকে বিসর্জন দিছেন। প্রেমের সাহিত্য তো মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়ে যাচ্ছে। প্রেমপত্র লেখার চর্চাটা অন্তত রাখেন। তাহলে প্রেমপত্রে সাহিত্য বেঁচে থাকবে। ছোট বাচ্চাদের মোবাইল দিয়ে বসায়া রাখে। এইটাও চিন্তাভাবনার বিষয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ৫১তম সমাবর্তনে এবার নিবন্ধন করেছেন ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট। এটি ঢাবির সমাবর্তনের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি এবং ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্য দেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপাচার্য মো. অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads