রাজধানীতে গণপরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তি

ছবি: বাংলাদেশের খবর

মহানগর

রাজধানীতে গণপরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ এপ্রিল, ২০২১

করোনা সংক্রমণরোধে বাসের অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির প্রথম দিনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়, অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাদের। অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু খোলা রেখে বাসের আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী বহনকে সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তি বলে মন্তব্য করেছেন রাজধানীবাসী। গতকাল বুধবার যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, পল্টন, কমলাপুর, খিলগাঁও, শাহবাগ, মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকেই এসব এলাকায় বাসের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। যাত্রা শুরুর স্থান থেকে মুহূর্তেই ভরে যায় বাসের অর্ধেক আসন। সেখান থেকে বাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পরবর্তী স্টপেজে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা উঠতে পারছিলেন না। এতে গণপরিবহন সংকটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের।

পরিবহন সংকটের কারণে অনেকে শেয়ারে রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশায় গন্তব্যে যান। কমলাপুর থেকে তেজগাঁও যাওয়ার বাসের অপেক্ষায় থাকা কুমকুম চৌধুরী বাসে উঠতে না পেরে পরে আরেক নারী যাত্রীর সাথে অফিস রওনা দেন। তিনি জানান, অন্যদিন কিছুক্ষণ পরপরই বাস পাওয়া যেত। কিন্তু আজ বাস পেলেও সবগুলোর দরজা বন্ধ। যাত্রার শুরুতেই অর্ধেক যাত্রী পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় গেট লক করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বলাকা পরিবহনের চালক ইউসুফ। তিনি বলেন, সায়েদাবাদ থেকে বাস ছাড়ার মুহূর্তেই বাসের অর্ধেক যাত্রী পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় গেট বন্ধ করে দিচ্ছেন তারা।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ভাড়া ৬০ ভাগ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও অনেক বাসে ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মিরপুর-১ নম্বর থেকে বাড্ডা পর্যন্ত ভাড়া ৩৫ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা। এ নিয়ে অছিম পরিবহনের বাস স্টাফদের সাথে বািবতণ্ডা হয় যাত্রীদের।

বাসের ভেতর যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক করা হলেও বাসের স্টাফ কিংবা যাত্রীদের অনেককেই মাস্ক ব্যবহারের মতো স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। আবার বাসে আসন সংখ্যার অর্ধেক খালি রাখার বাধ্যবাধকতাও মানেনি অনেক চালক-হেলপার। এ প্রসঙ্গে গাবতলী রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসের হেলপার সুমন বলেন, যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে পড়লে কিছু বলার থাকে না। এটা বরং আমাদের জন্য ক্ষতি। কারণ ট্রাফিক সার্জেন্টরা এসব বিষয়ে তীক্ষ নজর রাখছেন। অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী নিলে ট্রাফিক সাজেন্টরা জরিমানা করছে। তবে যাত্রীরা এ বিষয়ে উল্টো দোষারোপ করেছে বাস স্টাফদের। তাদের মতে, তারা ইচ্ছে করেই কিছু যাত্রী বেশি নিচ্ছে। বলার পরও তারা কর্ণপাত করছে না।

নতুন নিয়মের প্রথম দিন ট্রাফিক সার্জেন্টদের সাথে বাস স্টাফরা লুকোচুরি খেলে বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ নামে এক বাস যাত্রী। তিনি উত্তরা থেকে মতিঝিল আসছিলেন। তিনি বলেন, শুরুতে দুই সিটের বিপরীতে একটিতে যাত্রী নেয় তারা। পরে ৫-৭ যাত্রী নেয় দাঁড়ানো অবস্থায়। এ সময় অন্য যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও কর্ণপাত করেনি তারা। আবার রাস্তায় ট্রাফিক সার্জেন্ট দেখলে দাঁড়ানো যাত্রীদের বসিয়ে দেয় কন্ডাক্টররা। কিন্তু চালকের সহকারী সব যাত্রীর কাছ থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। কিন্তু সবার কাছ থেকেই ভাড়া ৬০ ভাগ বেশি নিচ্ছিল তারা।

এদিকে অফিসসহ কলকারখানা সবকিছু খোলা রেখে বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন ও ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় সাধারণ মানুসকে। হাবিবুর রহমান নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে মানুষের নাকাল অবস্থা। তার ওপর বাড়তি পরিবহন ভাড়া ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। তিনি আরো বলেন, গতবার করোনার সময় বাসে যাত্রী অর্ধেক করে ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও পরিবহন সংকট ছিল না। কিন্তু এবার অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছু খোলা রেখে পরিবহনে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক করায় মানুষের ভোগান্তি অনেক বেশি বেড়েছে।

চলমান করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে আবার সাধুবাদও জানিয়েছেন। মিজানুর রহমান নামে পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, গণপরিবহনের মতো স্থানগুলো থেকে করোনা সংক্রমণ বিস্তারের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। আবার অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও প্রয়োজন। মানুষের সাময়িক কষ্ট হলেও সবদিক বিবেচনায় সরকারের এ সিদ্ধান্ত যথার্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশে গণপরিবহনে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে গতকাল বুধবার থেকে। দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রেক্ষাপটে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। গত  ৩০ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের জন্য এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত সোমবার গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশনা জারি করে সরকার। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাসমালিকরা। বাস-মিনিবাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনার পর বাসমালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads