যেমন ছিলেন মহানবী (সা.)

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

যেমন ছিলেন মহানবী (সা.)

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ, ২০২১

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে ছিলেন সবার চেয়ে বীর সাহসী ও সবচেয়ে বেশি দানশীল। তাঁর কাছে কেউ কিছু চাইলে সাথে সাথে দান করতেন। নিজের কাছে না থাকলে ব্যবস্থা করে দিতেন। তাঁর ধৈর্যশীলতা ও সহনশীলতা ছিল সমুদ্রের ন্যায়। একবার সাহাবায়ে কেরাম কোনো কাফের গোত্রের জন্য আজাবের দোয়া করতে বললে তিনি বলেন, ‘আমি তো এসেছি রহমতস্বরূপ, আজাব হয়ে আসিনি।’ রাসুলের দাঁত মুবারক শহীদ করা হলে তখনো তিনি তাদের জন্য হিদায়াতের দোয়া করেন।

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি লজ্জাশীল। তাঁর দৃষ্টি কখনো কারো চেহারায় স্থির হয়ে থাকত না। নিজের ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। রাগান্বিতও হতেন না। কিন্তু দিনের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি তিনি সহ্য করতেন না। যখন পিয়ারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুটি কাজের একটি গ্রহণ করার অধিকার দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন, যেন উম্মতের জন্য সহজ হয়ে যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। হজরত আবু হোরায়রায় (রা.) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোনো খাবারের দোষ বর্ণনা করতে না।’ (বুখারি-মুসলিম)। রুচিকর হলে খেয়ে নিতেন, নতুবা রেখে দিতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য কখনো পাতলা চাপাটি তৈরি করা হয়নি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাটাইয়ের ওপর ঘুমাতেন। এ কারণে তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যেত।

হজরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘একদা আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গেলাম। তিনি খেজুর পাতার মাদুরে শুইয়ে ছিলেন। তাঁর শরীর ও মাদুরের মধ্যস্থলে কোনো বিছানা ছিল না। তাঁর শরীরের পার্শ্বে মাদুরের দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি পাতাভরতি চামড়ার বালিশে ভর দিয়েছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করুন, তিনি আপনার উম্মতকে প্রাচুর্য দান করবেন। পারস্য ও রোমকে প্রাচুর্য দান করা হয়েছে। অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। আল্লাহর রাসুল বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি তুমি কি এই রূপ চিন্তা কর? তারা এমন গোত্র যাদেরকে তাদের যাবতীয় কল্যাণ দুনিয়ার জীবনে দান করা হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তুমি কি রাজি নও? তাদের জন্য দুনিয়া এবং আমাদের জন্যে আখেরাত।’ (বুখারি-মুসলিম)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধু ও সকল মিষ্টি দ্রব্য পছন্দ করতেন। হজরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারবর্গ জীবনভর কখনো যবের রুটি পেটভরে আহার করেননি। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদের পরিবার-পরিজন একাধারে দুদিন পেট ভরে যবের রুটি আহার করেননি।’ (বুখারি-মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারে কখনো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো, দুই মাস যাবৎ চুলায় আগুন জ্বালাবার সুযোগ হতো না। তখন তাঁরা শুকনো খেজুর আর পানি দিয়েই জীবনযাত্রা করতেন। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত-তিনি উরওয়াকে বললেন, ‘হে আমার বোনের ছেলে! দুই মাসে তিন চাঁদের উদয় আমরা দেখেছি, কিন্তু মোহাম্মাদের বাসগৃহে আগুন জ্বালানো হয় নাই। উরওয়া জিগ্যেস করলেন, তখন কি জিনিস আপনাদেরকে বাঁচিয়ে রাখত? তিনি বললেন, খেজুর ও পানি। অবশ্য কোনো কোনো সময় প্রতিবেশী আনসারদের দুগ্ধদানকারী উটনি ছিল এবং তারা আল্লাহর রাসুলের জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। আমরা সেই দুধ পান করতাম।’ (বুখারি-মুসলিম)।

সুখ-তৃপ্তির জীবন গড়তে লজ্জাবোধ করতেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন। নিজের কাপড়ে নিজেই তালি লাগাতেন। পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করতেন। রোগীদের সেবা করতেন। ধনী বা গরিব হোক কেউ দাওয়াত দিলে সাদরে গ্রহণ করতেন। গরিব লোকের দারিদ্র্যের কারণে অবজ্ঞা করতেন না আর প্রভাবশালী বাদশার প্রতি রাজত্বের কারণে প্রভাবিত হতেন না। স্বীয় গোলামকে সওয়ারির পেছনে আরোহন করাতেন। মোটা কাপড় পরিধান করতেন। সেলাইকৃত জুতা ব্যবহার করতেন। সাদা কাপড় ছিল তাঁর কাছে অধিক পছন্দনীয়। সর্বদা আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকতেন। অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতেন। তিনি নামাজ দীর্ঘ করতেন এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করতেন। সুঘ্রাণ ছিল তাঁর কাছে পছন্দনীয় আর দুর্গন্ধ ছিল ঘৃণার বস্তু। গুণী ব্যক্তিদের সম্মান করতেন। কারো সাথে অভদ্র আচরণ করতেন না। বৈধ খেলাধুলা দেখলে নিষেধ করতেন না। কখনো কখনো হাসি-মজাক এবং বিনোদনমূলক কথাবার্তা বলতেন। সে ক্ষেত্রেও তিনি কখনো মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতেন না। তাঁর কাছে কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে মেনে নিতেন।

পৃথিবীর সকল মানুষের চেয়ে বেশি হাসিখুশি এবং শ্রেষ্ঠ চরিত্রবান ছিলেন তিনি। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো-রাসুলের চরিত্র কেমন ছিল? তিনি জবাবে বলেন,  রাসুলের চরিত্র ছিল আল কোরআন। (মুসনাদে আহমাদ)। কোরআনের দৃষ্টিতে যা পছন্দনীয়, রাসুলের কাছেও তা পছন্দনীয়, কোরআনের দৃষ্টিতে যা অপছন্দনীয় রাসুলের কাছেও তা অপছন্দনীয়। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি দশ বছর যাবৎ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম ছিলাম। কিন্তু তিনি কোনোদিন আমাকে বলেননি, তুমি এ কাজ এরকম করলে কেন? এ কাজ এরকম করলে না কেন? (বুখারি-মুসলিম)। আল্লাহতায়ালা  আমাদেরকে এই শ্রেষ্ঠ মানবের পরিপূর্ণ অনুসরণ এবং অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব।

লেখক :আবদুল কাদির ফারূক

আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads