পাঁচ সপ্তাহ আগে ভোটাভুটি শেষ হয়েছে। সরকারদলীয়রা ফুরফুরে মেজাজে। ঘরে-বাইরে এখনো আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটেনি। শুধু জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শতগজের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এর প্রতিবাদে রাজপথের শীতলতা কাটাতেই পারেনি বিরোধীরা। বলা চলে রাজপথে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। সরকারবিরোধীরা বলছে, স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনের হাওয়া বইবে। এ বেলায় ইস্যু হতে পারে স্থানীয় সরকার (উপজেলা) নির্বাচন। সরকার ও তাদের মিত্র দলপন্থিরা তাতে অংশ নিলেও বর্জনের কাতার দীর্ঘ হবে। জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন নিয়েও সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলতে সব ধরনের চেষ্টা করছে বিরোধীরা। গতকাল বুধবার কালো ব্যাজ ধারণ করে একটি প্রতিবাদ করেছে সরকারবিরোধীরা। দেশের বিভিন্ন দল যারা সরকারের বিপরীতে কথা বলছে, ইতোমধ্যে ওইসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ঐক্যফ্রন্ট।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মাত্র দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে, অবলম্বন করতে হবে বাড়তি সতর্কতা। তবে এই সময়ের মধ্যে কী ঘটবে তার ব্যাখ্যা করেননি প্রবীণ এই আইনজীবী। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, সরকার ৩০ ডিসেম্বর দেশের গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও দলনিরপেক্ষ নির্বাচনের কবর রচনা করেছে। তারা সরকার গঠন করেছে ঠিকই তবে তাতে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এখনো জনগণ প্রত্যাশা করে সরকারের বোধোদয় হবে, শিগগিরই আরেকটি নির্বাচন দেবে। যে নির্বাচনে মানুষ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, এটা সরকারের আরেকটি পাতানো খেলা। তাতে নির্বাচন কমিশনও সুর মিলিয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের মতোই নির্বাচনটি হবে আশা করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশন। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনের চিত্র কী হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে পারেনি। যারা তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদের অধীনে আর কোনো ভোট সুষ্ঠু হবে না- এটা জনগণ নিশ্চিত। তাই বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলো অংশ নেবে না। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দেশে একটা বিশেষ ঐক্য গড়ে উঠবে, তাতে সরকারের গদি নড়েচড়ে বসতে পারে বলে জানান তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম কারিগর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর দেশে কী হয়েছে সেটি আমরা কেন, দেশের সবাই দেখেছে। একে কি নির্বাচন বলবেন? জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল দাবি হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর দেশে যেহেতু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি তাই দ্রুত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আদায় করা। সব রাজনৈতিক দলকে এই দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। তার দৃষ্টিতে ডান-বাম ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী রাজনৈতিক দলগুলো বিনিসুতার মালায় ঐক্যবদ্ধ হবে এবং ধীরে ধীরে যুগপৎ আন্দোলনের দানা বাঁধবে।
জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আসা বিরোধী দলগুলোর নেতারা আবারো যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখছেন। নেতারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হবে। সেটি হচ্ছে, এই নির্বাচনে যারা অংশ নেবে না, তাদের সঙ্গে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করার দ্বার উন্মোচন হবে। তাহলে ভবিষ্যতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আলোচনা করে রাজপথে আসার সম্ভাবনা থাকবে। সব বিরোধী দলই যদি উপজেলা নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে ন্যূনতম ভিত্তিতে রাজপথে আসবে ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভয় পাবেন না, সারা দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। সুতরাং এখন সাহস নিয়ে লড়াই করতে হবে। একক মঞ্চ থেকে গড়ে ওঠা প্রতিবাদ এক সময় যুগপৎ আন্দোলনে রূপ নেবে বলেও তার আশা।
২৪ ফেব্রুয়ারি গণশুনানি : বিগত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে পরদিনই পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে মাত্র ৮ আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট। এর প্রতিবাদে গতকালই তারা মানববন্ধন কর্মসূচিতে মাঠে নামে। ফ্রন্টের লাখো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা কিংবা অনেকে কারাগারে বন্দি থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনো কর্মসূচিতে যায়নি ঐক্যফ্রন্ট। তবে ধীরে ধীরে এখন তারা পুনর্নির্বাচনের ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে।