যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে মানবপাচারের অভিযোগে বাংলাদেশির ৪৬ মাসের কারাদণ্ড

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ম্যাক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মানবপাচারে জড়িত থাকার দায়ে এক বাংলাদেশির ৪৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। তার বিরুদ্ধে ম্যাক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মানব পাচারে সহযোগিতা ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশির নাম মোহাম্মদ মিলন হোসেন (৪১)। তিনি ম্যাক্সিকোর তপাচুলায় থাকতেন। আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশিদের তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পারাপারের জন্য পৌঁছে দিতেন।

মিলন হোসেন তাপাচুলায় একটি হোটেলের ব্যবস্থা করেছিলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রত্যাশীদের রাখা হত।তারপর তপাচুলা থেকে মন্টেরিতে যাওয়ার প্লেনের টিকিট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান দিতেন। মন্টেরি থেকে মিলন হোসেনের সহযোগী মোক্তার তাদেরকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যবস্থা করতেন।

গত ২০১৯ সালের ৩১ শে আগস্ট টেক্সাসের হিউসটনে অবস্থিত জর্জ বুশ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছামাত্র মোহাম্মদ মিলন হোসেন (৪১) গ্রেপ্তার করা হয়। মিলন অর্থের বিনিময়ে টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে কমপক্ষে ১৫ জন বাংলাদেশীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ছিল। এ অভিযোগে মিলন মেক্সিকোর তাপাচুলায় বসবাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, মামলার প্রাথমিক শুনানির জন্য মিলান মিয়াকে ৩রা সেপ্টেম্বর টেক্সাসের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট জাজ ডেনা এইচ পালমেরো’র আদালতে তোলা হয়। এতে মিলন মিয়াকে আরো ফৌজদারি অপরাধের শুনানির জন্য আটক রাখতে নির্দেশ দেন বিচারক।

ওই বিবৃতি অনুযায়ী, মিলন মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে- তিনি ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশীদের পাচার করেছেন।

মিলন বাংলাদেশ থেকে অর্থের বিনিময়ে অনেক নাগরিককে মেক্সিকো নিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১৫ জন বাংলাদেশীকে টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আরও অভিযোগ আছে যে, তিনি মেক্সিকোর টাপাচুলায় একটি হোটেল ব্যবসা করেন। বিভিন্ন মানুষকে সেখানে নিয়ে রাখেন তিনি। তাদেরকে খাবার দেন। আশ্রয় দেন। তারপর তাদেরকে বিমানের টিকেট দেন মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার। সেখানে পাচারকারীদের সঙ্গে সাক্ষাত করিয়ে দেয়া হয় ওইসব মানুষকে। পাচারকারীরাই ওইসব ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যায়। এমন অভিযোগ স্বীকার করেন মিলন মিয়ার এক সহযোগী মোকতার হোসেন গত সপ্তাহে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের ক্রিমিনাল ডিভিশনের সহকারী এটর্নি জেনারেল ব্রায়ান এ বেনজোওস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে মানব পাচারকারী চক্রগুলো। মিলন মিয়াকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে একটি শক্ত বার্তা দেয়া হয়েছে যে, যেসব ব্যক্তি ব্যক্তিগত লাভের জন্য আমাদের জাতীয় অভিবাসন আইনের প্রতি ষড়যন্ত্র করবে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর আইন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে টেক্সাসের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট-এ যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি রায়ান কে প্যাট্রিক বলেছেন, আমাদের সীমান্তকে নিরাপদ করা হলো জাতীয় নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারীদের অগ্রাধিকার। মাঝে মধ্যে আমাদের সীমান্তকে অপকর্মে ব্যবহার করতে কিছু বেপরোয়া সংগঠন সহযোগিতা করে। এসব নিয়ে অনুসন্ধানী কাজ করে বহু এজেন্সি। তাদের এ কাজের কারণে এসব গ্রুপকে থামানো হয়েছে এবং বিদেশী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়েছে।

সান অ্যান্টনিওতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনের (এইচএসআই) স্পেশাল এজেন্ট ইনচার্জ শেন ফোল্ডেন। তিনি বলেছেন, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে মিলন মিয়াকে গ্রেপ্তার। এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটি বড় অংশ। তিনি আরো বলেন, এইসএসআন অব্যাহতভাবে প্রচণ্ড তৎপরতার সঙ্গে অনুসন্ধান করে যাচ্ছে এবং ভেঙে দিচ্ছে বহুজাতিক অপরাধী চক্রগুলোকে, যারা জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি প্রদর্শন করছে। আমাদের সীমান্তের অখন্ডতা ও আমাদের সম্প্রদায়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads