ময়মনসিংহে আ.লীগের রাজনীতিতে অস্থিরতা

ময়মনসিংহে আ.লীগের রাজনীতিতে অস্থিরতা

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

মন্ত্রী ও মেয়র গ্রুপ দ্বন্দ্ব

ময়মনসিংহে আ.লীগের রাজনীতিতে অস্থিরতা

  • ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৮ অক্টোবর, ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থির হয়ে উঠছে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলীয় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রকাশ্যে ও গোপনে চলছে কূটকৌশলের চর্চা। ময়মনসিংহে মন্ত্রী ও মেয়র গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ বিরোধে এবার প্রকাশ্যে যুক্ত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম। তার বাসা ও শহরের রাইফেলস ক্লাবে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ এনে শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন আরিফের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। এ মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূক দাবি করে তা প্রত্যাহারে নগরীতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল করছেন মহানগর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। রোববারের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়রের সমর্থক নেতাকর্মীরাও। এ মামলাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অন্ধকার নেমে আসার আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

এদিকে মামলার বাদী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলমের পক্ষে সরব হয়েছেন মন্ত্রী বলয়ের নেতাকর্মীরা।

তবে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ ‘ব্লেমগেমের রাজনীতি’র শিকার বলে অভিযোগ তার পক্ষের নেতাকর্মীদের। তাদের ভাষ্য, চার বছর আগের জেলা ছাত্রলীগের আলোচিত কাউন্সিল থেকে আজ অবধি দলীয় প্রতিপক্ষের বরাবরই ‘টার্গেট’ এই ছাত্রলীগ নেতা। একাধিকবার চেষ্টা করেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রিয় এই ছাত্রনেতাকে ‘পদ’ থেকে মাইনাস করার মিশনে তার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সফল হতে না পারলেও তাদের এবারের যাত্রায় কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড এ বিরোধ শক্তহাতে দমন করতে না পারলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কঠিন মাশুল গুনতে হতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও তার ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত। অন্যপক্ষের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল।

দু’পক্ষের বিরোধে সম্প্রতি খুন হন মহানগর যুবলীগ সদস্য আজাদ শেখ। এ ঘটনায় ধর্মমন্ত্রীর ছেলে শান্তকে এক নম্বর আসামি করে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা নেয় পুলিশ। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে শান্ত সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকায় এ পক্ষের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম।

সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে চাঁদাবাজির ঘটনায় এহতেশামুল আলম শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন আরিফকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে যুবলীগ নেতা আজাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন বলে মন্তব্য করেন।

এ মন্তব্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরের রাইফেলস ক্লাবের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন করেন। ওই শোডাউনের পরই নাটকীয় মোড় নেয় ময়মনসিংহের রাজনীতি। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম অভিযোগ করেন, তার বাসা ও রাইফেলস ক্লাবে হামলা ও ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। এ অভিযোগে তিনি শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফসহ ১০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ করেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরাও ডিসি ও এসপিকে স্মারকলিপি দেন। আরিফের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ এনে গত ৩ অক্টোবর বিকালে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া ওই রাতেই শহর ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা একটি অডিও ছাড়েন ফেসবুকে। সেই অডিওতে রাইফেলস ক্লাবের অফিস সহকারী সুবল বলেন, ‘কেউ অফিসের ভেতর ঢুকতে পারেনি। অফিস তালা মারা ছিল। ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামনে দিয়ে চোটপাট করে গেছে।’

ঘটনার পর থেকে শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফ বলে আসছেন, ‘হামলার অভিযোগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবার আসনে আছেন। আর ছাত্রলীগ পুত্র সমান। ছাত্রলীগ মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো বেয়াদবি করেনি।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতির বাসা বা ক্লাবে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা আমি শুনিনি। সেদিন শুধু মোটরসাইকেল শোডাউন হয়েছিল। কিন্তু এখন অন্য কিছু বলা হচ্ছে।’

শহর ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান লিমন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত না করেই মামলা নিয়েছে। অথচ আজাদ হত্যাকাণ্ডের বেলায় ঘটেছে উল্টো ঘটনা। মূলত আরিফকে বরাবরই ফাঁসাতে সক্রিয় পক্ষটির নেতাকর্মীরা এ যাত্রায় সফল হয়েছেন।’

শহর ছাত্রলীগ নেতা কায়সার আহমেদ ও আশিক চন্দ্র দে বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা যাচাই না করেই কেন্দ্র কঠোর হয়েছে। তাদের ভুল বোঝানো হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তৃণমূলে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads