মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর, ২০২০

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ নারী ও পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও অনেকেই হরমোনজনিত সমস্যার কারণে নারী-পুরুষের সহজাত গুণাগুণ ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নিতে পারে না, যাদের আমরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করি। যদিও সমাজে তাদের অবহেলা ও ঘৃণার চোখে দেখা হয় বলে তারা ‘হিজড়া’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। হিজড়া বলে ডাকা কাম্য না হলেও এটিই এখন সমাজ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের মানুষের কাছে তারা নামমাত্র মানুষ হিসেবে গণ্য হলেও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অনীহা সমাজের মানুষের, অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও। স্বয়ং পরিবারের সদস্যরাই তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে জন্ম নেওয়া সন্তানদের পরিবার থেকে বের করে দেয়।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সমাজে অভিশাপ মনে করা হয়। যেসব পরিবারে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ জন্ম নেয়, তাদের অপয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে এই সন্তান বুঝে ওঠার আগেই সমাজচ্যুত করে দেওয়ার ফলে তারা নিজেদের মতো বাঁচার জন্য অন্যান্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে দলভুক্ত হয়ে বসবাস করে। তবে ইদানীং অনেক পরিবারই আছে, যারা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের বের করে না দিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়। যারা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করে, পরিবারের কাজকর্ম করে, অন্য সবার মতো বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, তারা কখনো সমাজচ্যুতদের মতো বিশৃঙ্খলা করে না।

ইসলাম ধর্মেও সব মানুষকে নর-নারী হিসেবে গণ্য করে তাদের অধিকার, করণীয় ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে বরা হয়েছে। পবিত্র কোরআন কিংবা হাদিস শরিফে তৃতীয় লিঙ্গ বলে আলাদা কোনো জীবন ব্যবস্থা রাখা হয়নি এদের জন্য। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানবজাতি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে।’ (সুরা হুজরাত : ১৩)। অন্যত্র এসেছে, ‘আর আমি বানিয়েছি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় (পুরুষ-নারী)।’ (সুরা নাবা : ৮)। মহানবী (সা.) এসব মানুষকে ‘হিজড়া’ বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা এদের হিজড়া বলো না, এরা নারী বা পুরুষ।’ আমরা তাদের হিজড়া বলার পরিবর্তে সুন্দর ভাষায় তৃতীয় লিঙ্গ বললেও মূলত তৃতীয় লিঙ্গ বলতে কিছু নেই, এটি বলার সুবিধার্থে সৃষ্ট মাত্র। তারা নারী বা পুরুষ, শুধু অক্ষমতাই অন্যান্য মানুষ থেকে আলাদা করে রেখেছে। তারা অন্যান্য নারী-পুরুষের মতোই গণ্য হয়ে সকল ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধাদি ভোগ করার অধিকারী হবেন এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনেও তাদের নারী অথবা পুরুষ হিসেবেই গণ্য করেই তাদের কর্মফল প্রদান করা হবে। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম হিসেবে, পবিত্র ইসলামে সকলকে মানুষ হিসেবে গণ্য করলেও ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অপয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ‘হিজড়া’ দেখলে দিনটি ভালো কাটবে না মর্মে কুসংস্কারে বিশ্বাস করে তাদের ঘৃণার চোখে দেখা কাম্য হতে পারে না।

সম্প্রতি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে মুফতি মুহাম্মদ আবদুর রহমান আজাদের একান্ত প্রচেষ্টায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। সমাজ যেখানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ঘৃণার চোখে দেখে, তাদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু করা যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। মাওলানা আজাদের মাধ্যমে কুসংস্কারমুক্ত হয়ে তাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে মৌলিক অধিকার প্রদানের যে জাগরণ শুরু হয়েছে তা চলমান রাখাতে হবে। আর এর মাধ্যমে দেশের সব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই গণ্য করে তাদের প্রাপ্য সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ঘৃণার চোখে না দেখে, অপয়া মনে না করে, সমাজ থেকে বের করে না দিয়ে পরিবারের মধ্যেই তাদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়াসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে প্রথমত বাবা-মাকেই। এছাড়া যারা ইতোমধ্যে সমাজচ্যুত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে, তাদেরও পূর্ণ অধিকার প্রদানের মাধ্যমে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।

জুবায়ের আহমেদ

লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads