মুক্তমত

মুসলিম বিশ্বের ঐক্যজোট এখন সময়ের দাবি

  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই, ২০২১

মো. রাশেদ আহমেদ

 

আধুনিক বিশ্বে মুসলিম দেশগুলো বর্তমানে সবচেয়ে ক্রান্তিকাল সময় পার করছে। এর বড় কারণ নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দলই দায়ী। যার পেছনে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের মতো কৌশলী রাষ্ট্রগুলো। উদারহরণস্বরূপ বলা যায় ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা, ইয়েমেন গৃহযুদ্ধ, সিরিয়াযুদ্ধে মতানৈক্যে না পৌঁছাসহ উপসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে বাড়তি উত্তেজনা। মূলত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে লেলিয়ে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত কৌশলী রাষ্ট্রগুলো বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বা টানটান উত্তেজনা বিরাজ না করলে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি করবে কার কাছে? ইসরাইল কীভাবে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে? বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোকে কেন্দ্র করে। হরমুজ প্রণালী নিয়ে বর্তমান ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ-অবস্থান করছে। যার ফলে পরমাণু মজুত বৃদ্ধির অভিযোগে ইরান এখন বড় অর্থনৈতিক অবরোধের মুখোমুখি। অভিযোগ আছে, এসবের পেছনে কলকাঠি হিসেবে কাজ করছে খোদ সৌদি আরব। শুধু তা-ই নয়, ইয়েমেন যুদ্ধ অবসান না হওয়ার পিছনে সৌদি জোটকে দায়ী করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব ঘুম থেকে জাগবে কবে? বা তাদের মাঝে ভুল ভেঙে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে কবে?

১৯৬৭ সালে ৫ জুন ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। শুধুু এ যুদ্ধে নয়, ১৯৪৮ সালে আরব ভূমিতে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয় এবং ইসরাইল আরবদের জেরুজালেম, সিরিয়ার গোলান মালভূমিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয়। ১৯৬৯ সালে ইসরাইল জেরুজালেমে অবস্থিত মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগ করলে মুসলিম বিশ্ব নড়েচড়ে বসে। যার ফলে ওআইসি বা আরব লীগ সংস্থার সূত্রপাত ঘটলেও আজও সেই মসজিদ মুসলমানদের জন্য অরক্ষিত। এছাড়া রয়েছে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থা ‘অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন’ ও ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’ (জিসিসি)। কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

আরব লীগ গঠনের পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, পবিত্র স্থান ও নিদর্শনসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্যালেস্টাইন জনগণের সমর্থন দান তথা তাদের আবাসভূমি পুনরুদ্ধার। একই সঙ্গে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মর্যাদা, স্বাধীনতা রক্ষা করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, দীর্ঘ পরিক্রমায় এর ফল হয়েছে উল্টো। নিজেদের মধ্যে বেড়েছে কোন্দল ও মতভেদ। মুসলিম পরাশক্তি হিসেবে খ্যাত ইরান, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসরের মতো দেশগুলো আজ অন্তর্কোন্দলের বেড়াজালে জর্জরিত। আজ মুসলিম বিশ্বগুলো ঐক্যবদ্ধ না হওয়ার কারণে স্বাধীনতা হারাচ্ছে চীনে উইঘুর, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়। বিভিন্ন অজুহাতে মার্কিনিদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি লিবিয়া, ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো।

অপরদিকে বর্তমান সফল সংস্থা ন্যাটো সম্পর্কে জানা দরকার। ১৯৪৯ সালে ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। এই সংস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্ন্তজাতিক শান্তি নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করা, জোটভুক্ত দেশসমূহকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা। এছাড়া তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও ন্যাটোর উদ্দেশ্য সংকোচন করা হয়নি। বরং এর সমপ্রসারণ আরও বেড়েছে, সন্ত্রাস দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ন্যাটো।

বর্তমান মুসলিম বিশ্ব ও মুসলিম জাতিকে সকল ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ‘অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনে’র অধীনে ‘আর্মি ওব মুসলিম বাহিনী’ অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। পাশাপাশি বিশ্বের পরাশক্তিধর মুসলিম দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে শিয়া, সুন্নি মতভেদ ভুলে একই কাতারে দাঁড়াতে হবে, যাতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের বন্ধন দৃঢ়তা পায়।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads