আবু তালহা রায়হান
‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহতায়ালার। যিনি প্রশংসার হক্বদার। তিনি অনাদি ও অনন্ত। সত্যবাদীকে পুরস্কৃত করবেন এবং প্রতারক ও মিথ্যাবাদীকে শাস্তি দেবেন। যা তাঁর সুচিন্তিত ও ইনসাফপূর্ণ ভিত্তিতে স্থিরকৃত। সাক্ষ্য প্রদান করছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। তাঁর প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম।’
মানুষের মধ্যে এমন কিছু খারাপ স্বভাব আছে, যা নিন্দনীয় ও গর্হিত। যেমন : প্রতারণা, মিথ্যাচার, গীবত, ওয়াদা খেলাপ, মুনাফিকি ইত্যাদি। প্রতারণা একটি মারাত্মক রোগ। নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অসৎ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য মানুষ তার নোংরা মস্তিষ্ক দিয়ে বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা সাজিয়ে শিকারকে ঘায়েল করে। নিজের উদ্দেশ্য ও গোপন কুইচ্ছা পূরণের জন্য যারা এধরনের প্রতারণার কাজে নিজেদের জড়িয়ে থাকে তাদেরকে প্রতারক বলে। প্রতারণা বা কৌশলে অন্যকে ঠকানো কবিরা গুনাহ এবং হারাম। বর্তমানে মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে। প্রতারণা আর প্রতারকের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সাধারণ ও সৎ মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রতারকরা নিজের ঘর থেকেই প্রতারণা শুরু করে। এই প্রতারণা হরেকরকম হতে পারে।
ইসলামে ধোঁকা ও প্রতারণার কোনো স্থান নেই। কোনো মুসলমান ধোঁকা দিতে পারে না। ধোঁকা মুনাফিকের স্বভাব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে প্রতারণার জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মুনাফিকরা মুখে মুখে বলত আমরা আল্লাহকে, আল্লাহর রাসুলকে এবং কোরআনকে মানি, কিন্তু তারা বাস্তবে তা মানত না। যার ফলে আল্লাহতায়ালা এই আয়াত নাযিল করেন-‘এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহকে এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করি। প্রকৃতপক্ষে তারা বিশ্বাস করেনি, তারা আল্লাহকে ও মুমিন বান্দাদেরকে ধোঁকা দিতে চায়। (সত্য কথা এই যে) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না এবং তাদের এই বিষয়ে কোনো উপলব্ধি নেই।’ (সুরা বাকারা আয়াত-৮, ৯)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যদি তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তবে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট। তিনিই নিজ সাহায্যে মুমিনদের দ্বারা তোমাকে শক্তিশালী করেছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত-৬২)
আয়াতে আল্লাহতায়ালা ধোঁকাবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তারা মুখের কথার মাধ্যমে আল্লাহ ও মুমিন বান্দাকে ধোঁকা দিতে চায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই ধোঁকার শিকার হয়েছে। কারণ এ ধোঁকার পরিণাম তাদের জন্য অশুভ হবে। তারা মনে করেছে নিজেদেরকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে তারা কুফরের পার্থিব পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। অথচ আখেরাতে তাদের জন্য কঠিন আযাব অপেক্ষা করছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধোঁকা ও প্রতারণাকারী সম্পর্কে কঠোর বাক্য উচ্চারণ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ধোঁকাবাজ ও প্রতারণাকারী জাহান্নামে যাবে। (বায়হাকি) যারা আল্লাহতায়ালা, নবী আলাইহিস সালাম ও মুমিনদের ধোঁকা দেবে তারাই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অন্তরে মজবুত ঈমান লালন করা, ঈমানের কথা প্রকাশ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, মুখে এক কথা আর অন্তরে অন্য কথা। এটা কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না। মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো সে কখনো ধোঁকা দেবে না এবং ধোঁকার শিকার হবে না। যুগে যুগে ধোঁকাবাজ ছিল, এখনো আছে। কিন্তু ইচ্ছে করে কারো সঙ্গে ধোঁকাবাজি করা যাবে না, এমনকী ঠাট্টাচ্ছলেও না।
প্রত্যেক মুমিনের প্রতিজ্ঞা হওয়া দরকার- ধোঁকা দেবো না এবং ধোঁকায় পড়বেও না। আমরা যে সমাজে বাস করি সেখানে সর্বত্রই ভেজালের ছড়াছড়ি। ধোঁকা প্রতারণার জাল বিস্তার করছে সর্বত্র। কে কাকে ঠকাবে সে চিন্তায় ব্যস্ত সবাই। এ কথাগুলো অস্বীকার করার মতো নয়। কেউ অবিশ্বাস করতে পারবে না এ বাস্তবতা। অথচ মুসলমানদের আদর্শ এটা নয়, আমাদের নবীজির আদর্শ এটা নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিন কখনো এক গর্তে দুবার পা দেয় না।’ তিনি (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিন কাউকে ধোঁকা দেয় না এবং ধোঁকা খায় না।’
লেখক : বার্তা সম্পাদক, ইজহারে হক