পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে টাকা না দিলে অর্থ সচিব ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিবকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে আনা এক সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আজ আপিল বিভাগ এ আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
গত ৮ অক্টোবর মুন সিনেমা হলের মালিককে এই টাকা পরিশোধের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ তা পরিশোধে সম্মত হওয়ার কথা জানান অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে বিষয়টি মূলতবি রাখা হয়েছিল।
উল্লেখ, পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় এসেছিল। তবে ওই সম্পত্তির অর্থে এখনো পায়নি মালিকপক্ষ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির বরাতে আদালতকে জানানো হয়েছিল, সংশোধিত বাজেট থেকে ওই অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, মুন সিনেমা হল ও এর সম্পত্তির মূল্য বাবদ ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা পরিশোধের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। পরে ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এক পর্যায়ে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়।
বিষয়টি নিয়ে ইতালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেয়। রায়ে মোশতাক, সায়েম ও সেনা কর্মকর্তা জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইতালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
আদেশে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।