মাত্র দু'বছর আগেও মুন্সীগঞ্জ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামে ৭২টি পরিবার বসবাস করতো। গত বছর পদ্মার প্রচণ্ড ভাঙনে প্রায় ৫০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে গত বছরের শেষ দিকে ভাঙ্গন থামলেও চলতি বর্ষার শুরুতেই শুরু হয় ওই এলাকায় ভাঙ্গন। গত কয়েকদিন যাবত তীব্র আকার ধারণ করছে ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন। কয়েকদিনের ভাঙ্গনে ২০টি পরিবারের বসতভিটা ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ওই গ্রামে মাত্র ৫/৬ টি পরিবার রয়েছে। যাদের বসতভিটা ও বিলীনের পথে। তারাও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। ওই পরিবারগুলোও ভাঙন আতঙ্কে ভুগছে। যেভাবে পদ্মা নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ওই গ্রামটি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরোজমিনে, ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ওই গ্রামের অধিকাংশ বসতভিটা এখন নদীগর্ভে। কদিন আগেও যেখানে বসতভিটা ছিল এখন তার উপর দিয়ে বইছে নদীর প্রচণ্ড স্রোত। বসতভিটার একচিলতে ভূমি নদীর পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন জনমানবহীন গ্রামটি একপাশে পদ্মা নদী অপর পাশে বিস্তীর্ণ পানিতে তলিয়ে যাওয়া কৃষি জমি মাঝখানে জেগে আছে ওই গ্রামের এক চিলতে ভূমি। যা হয়তো দু'এক দিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে নদীতে ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ওই গ্রামে বাচ্চু হালদার, মজিদ খাঁ , তারা ফকির,আলমগীর খান,সাহেব আলী, ওয়াসিম আলী ফকিরের শুধু বসতভিটা রয়েছে তারা বসতভিটা সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজেদের ঘর ভাঙছে মনির মিস্ত্রি,অহিদুল, মুসলিম হালদার, মনির বেপারী সিরাজ তালুকদার। চোখমুখে তাদের এখোন ঝাপসা অন্ধকার।
৮০ বছরের বৃদ্ধা সিকিম আলী ফকির বলেন, নদী চলে আসায় ঘর ভাঙতাছি। এখনও ঠিক করে বলতে পারছিনা কোথায় যাব। একমাত্র ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা হয় করে তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে এখন যে ঘর উঠাবো সেই টাকা নেই ।
ঘর ভেঙে নিয়ে যাওয়ার পর আসবাবপত্র গোছাচ্ছেন রহিমা বেগম (৪০)। তিনি জানান,তার আত্মীয়র বাড়িতে আপাতত ঘর নিয়ে রেখেছেন। কোন সাহায্য সহযোগিতা পেলে নিজের ভেঙে নেওয়া ঘরগুলো পুনরায় তুলবেন। ওই এলাকার দেলোয়ার হোসেন জানান, এই গ্রামটিতে ২বছর আগে ৬০থেকে ৭০ টি পরিবার বসবাস করত ।এখন মাত্র চার থেকে পাঁচটি পরিবার আছে ।যারা আছে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে গ্রাম ছাড়ার জন্য। দু-একদিনের মধ্যেই হয়তো বিলীন হয়ে যাবে এই গ্রামের শেষ ভিটিটুকু।
স্থানীয় ওই এলাকার ইউপি সদস্য আসলাম হালদার ভোলা মেম্বার জানান, ওই গ্রামে দুই বছর আগেও ৭০ টি পরিবার বসবাস করত ।গত বছর ৪০থেকে ৫০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । এ বছর ২ টি পরিবারের বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। এখন মাত্র ৫থেকে ৬ পরিবার রয়েছে তারাও তাদের ঘরবাড়ি শরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আমরা কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তবে চেয়ারম্যান সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে ভাঙ্গনকবলিতদের তালিকা চেয়েছে আমি তালিকা জমা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গন কবলিত মানুষদেরকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে আরও খাদ্য সহায়তা দেওয়া অব্যাহত থাকবে । পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের নদী ভাঙন এর বিষয়টি জনানো হয়েছে এবং তারা সেখানে পরিদর্শনও করেছেন।