শিক্ষা

মুন্সীগঞ্জে ৪৬৫ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ব.ম শামীম , মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:


*প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬১০টি, শহীদ মিনার রয়েছে ২১৪টি বিদ্যালয়ে।
* মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭৯টি, শহীদ মিনার রয়েছে ১১০টি বিদ্যালয়ে।
*বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।


মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৪৬৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এ জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে ৭৮৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৩২৪টিতে নেই ৪৬৫টি বিদ্যালয়ে। যে সমস্ত বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই ওই সমস্ত বিদ্যালয়ে অধিকাংশটিতে কলাগাছ, ইট, কাঠ, বাশঁ, কাগজ, কাপড় দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করে ফুল দেন শিক্ষার্থীরা। অবার অনেক শিক্ষার্থীদের ফুল দেওয়া হয়না শহীদ মিনার না থাকায়। এতে বই-পুস্তকে ভাষা দিবস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করলেও স্ব-শরীরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমান শিক্ষার্থী।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া, মুহিদুল, ঝর্ণা, অভি, সানজিদা, আরিফিন, বাধনসহ ১০ থেকে ১২জনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তারা বইয়ে পড়েছেন। কিন্তু কখনো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফুল দেওয়া হয়নি তাদের। তাদের মধ্যে কয়েকজনের কলাগাছ, বাঁশ, কাপড় ও কাগজ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন বলে জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ৬১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ২১৪টি বিদ্যালয়ে। সবচেয়ে বেশি সিরাজদিখান উপজেলার ১২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৮টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এছাড়া লৌহজং উপজেলায় ৭৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টি বিদ্যালয়ে, শ্রীনগর উপজেলায় ১১২টির মধ্যে ৩৪টি বিদ্যালয়ে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১৫টির মধ্যে ৩৪টি, টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ৯২টির মধ্যে ৩১টি এবং সবচেয়ে কম গজারিয়া উপজেলার ৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে মাত্র ১১টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।
অন্যদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ১৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ১১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। সবচেয়ে বেশি সিরাজদিখান উপজেলার ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে ২৭টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদরে ৪০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪টি, শ্রীনগরে ৩০টির মধ্যে ১৮টি, টঙ্গিবাড়ীতে ২৭টির মধ্যে ১৬টি, গজারিয়ায় ২৩টির মধ্যে ১৩টি, লৌহজং উপজেলায় ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জে শতকরা মাত্র ৪১ শতাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, যেই সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে অধিকাংশ অবহেলা অযত্নের কারণে বেদীতে নোংরা-আর্বজনা পড়ে আছে। অনেক শহীদ মিনারে পাশের নির্মীয়মান স্থাপনার বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে শহীদ মিনারের বেদীতে।
শহীদ মিনারে বালু স্তুপের বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা বেগম বলেন, 'বিদ্যালয়ের পাশে পানির ট্যাংক নির্মাণ কাজ চলছে। তাদের বহুবার শহীদ মিনারের কাছে বালু রাখতে নিষেধ করা হলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানের থেকে অনুমতি নিয়ে এখানে বালু রেখেছেন।'
শহীদ মিনারের গুরুত্ব তুলে ধেও সদর উপজেলার পূর্বরাখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিদার হোসেন বলেন, 'বাঙালি জাতির চেতনার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার স্থাপন অতিগুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।'

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, যে সমস্ত বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার রয়েছে ওগুলো স্থাণীয়দের উদ্যেগে তৈরা করা হয়েছে। আমরা জরিপ করে তথ্য পাঠিয়েছি বাকি স্কুলগুলোতে পর্যায়ক্রমে সরকারী একটি প্রজেক্টের অধিনে শহীদ মিনার তৈরী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন 'প্রাথমিক পর্যায় শিশুদের দেশপ্রেম তৈরি হয়। এসময় দেশের গৌরবময় স্মৃতিগুলোর সাথে শিশুদের পরিচিত করার প্রয়োজন। বই-পুস্তকে সীমাবদ্ধ না রেখে, স্ব-শরীরে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।'
বিষয়টিতে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল হক ভূঞা বলেন, 'শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো বরাদ্দ নেই। অধিকাংশ বিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে আবার কেউ কেউ উপজেলা ও জেলা পরিষদের অর্থায়নে শহীদ মিনার নির্মাণ করে। ফলে অর্থ সংকটের কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় অনেক বিদ্যালয়। এমতাবস্থায় ভবিষৎ প্রজন্মের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করার প্রয়োজনে হলেও প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়।'

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads