সম্পাদকীয়

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার

মিশনগুলোর জবাবদিহিতা চাই

  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

আবারো সৌদি আরব থেকে ক্ষতবিক্ষত নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা ফিরে এলো। ৮১ নারী শ্রমিক ও ৪৭ পুরুষ শ্রমিক নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন ও তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এদের মধ্যে তিন জন নারীশ্রমিকের অবস্থা খুবই নাজুক। এই তিন নারীর দুজন হলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ফাতেমা ও সুনামগঞ্জের হালিমা। অপরজন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলায় পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত এসব নারী তাদের নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। পরে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীশ্রমিক শুধু পরনের কাপড়টুকু নিয়ে দেশে ফিরেছেন, সঙ্গী তাদের সৌদি জেলের তিক্ত অভিজ্ঞতা। এখন এদের ট্রমা থেকে উদ্ধার করতে মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কাজ করে চলেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। অন্যদিকে পুরুষ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নেওয়া হলেও তারা কোনো কাজ পাননি, বেতন নেই, আকামা নেই। আবার যাদের আকামা রয়েছে, তারা অন্যত্র কাজ করতে গেলে সৌদি পুলিশ তাদের ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

আমাদের ভাবতে হবে, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর অর্থ শুধু প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিই নয়; বরং আমাদের শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নতুবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অসহায় অবস্থায় আমাদের নারীশ্রমিকদের ফিরে আসতে হতো না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহশ্রমিক, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নারীশ্রমিক পাঠানো হলেও তাদের একটি অংশকে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়। ফলে নারীশ্রমিকদের একটি ব্যাপক অংশ গত বছর ফেরত আসে। এক্ষেত্রে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি লাইসেন্স নিয়ে একটি অবৈধ সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে মিলে নারী পাচার করছে। এসব এজেন্সি চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে আমরা মনে করছি। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো কার্যত সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের যে সময়মতো প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে অপারগ বা গড়িমসি করে থাকে, সে অভিযোগ অতীতে বহুবার আমরা জেনেছি। এসব মিশনকে কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদের ভুললে চলবে না, বিদেশে তাদের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষদের সহযোগিতা করা এবং রাষ্ট্রের স্বার্থহানি যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে তৎপর থাকা।

তবে এ কথা সত্য, বর্তমান সরকারের আমলে বিদেশে পাঠানো কর্মীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ১৬৫টি দেশে তার জনশক্তি রফতানি করছে। আর গত দশ বছরে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে মোট ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৯১৪ জন। এটি সম্ভব হয়েছে ২০১৬ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন সংশোধনের ফলে। ওই আইনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নির্দেশনা, অভিবাসীদের সুরক্ষা, স্ব-স্ব দেশের শ্রমবাজার সম্পর্কে পর্যালোচনা রিপোর্ট দেওয়া এবং নতুন শ্রম শাখা খোলার নীতি গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেই অভিবাসন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারের এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ বিদেশে আমাদের জনশক্তি রফতানিতে অগ্রগতি এনেছে। সুতরাং বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের আরো সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads