যোগাযোগ

মিরপুর বিআরটিএতে উপচেপড়া ভিড়

‘মনে হচ্ছিল এ যেন ঈদের কোনো বাস টার্মিনাল’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৫ নভেম্বর, ২০১৯

মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে গতকাল সোমবার ছিল উপচেপড়া ভিড়। দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন ঈদের কোনো বাস টার্মিনাল। কোথাও ছিল না একটু দাঁড়িয়ে থাকার মতো জায়গা। আর মানুষের মানুষের মুখে মুখে ছিল একটাই কথা ‘কখন কাজ শেষ হবে’। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ নিয়ে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার পর থেকেই মিরপুর বিআরটিএতে ভিড় বাড়তে থাকে। আগে ভিড় থাকলেও সরকার নতুন আইন নিয়ে কাজ শুরুর পর এই দু’একদিনের মধ্যে ভিড় আরো বেড়েছে বলে জানান মিরপুর বিআরটিএতে ডিউটিরত আনসার সদস্য ইমরান।

সরেজমিন দেখা যায়, বিআরটিএ অফিসের গেটের বাইরে মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। ভেতরে জায়গা নেই। মসজিদের পাশের গেটে ভেতরে প্রবেশ করতেই বাঁ দিকে দেখা যায়, হেল্পডেস্কের সারিতে মানুষের ঠাসাঠাসি। হেল্পডেস্কে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স সম্পর্কিত কাজ করা হয়। এখানে কথা হয়, শিক্ষানবিশ লাইসেন্স প্রার্থী ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, লাইনে আমার সামনে ১০ জন লোক আছে। আমি প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু সামনের লোক নড়ছেই না।

নতুন আইনের প্রভাবে ড্রাইভিং শিক্ষানবিশ লাইসেন্স করার হিড়িক লেগে গেছে বলে জানান হেল্পডেস্কে কর্মরত এক আনসার সদস্য। তিনি বলেন, এত মানুষ বিআরটিএতে কখনো দেখিনি। হেল্পডেস্কের পাশে ছিল মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। এখানে ডিজিটাল নম্বর প্লেটের কাজ চলছিল। এই ভিড় সারা বছরই থাকে। তবে ১২২ নম্বর কক্ষের সামনে ভয়াবহ ভিড় দেখা গেছে, যা সারা বছর থাকে না। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ডের জন্য ছবি তোলা হয়। এখানে কোনো সিরিয়াল ছিল না। প্রার্থীদের হাতে টোকেন ছিল, সে অনুযায়ী ভেতর থেকে ডাকা হচ্ছিল। কিন্তু ডাকার গতি ছিল ধীরগতির। ফলে জটলা বাড়তেই থাকে। এখানে কথা হয় ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসা সোহেলের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিরপুর বিআরটিএতে আসা মানে জীবনটাই শেষ। আমি সকাল ৯টায় আসছি রামপুরা থেকে, এখন বাজে আড়াইটা। কত কক্ষে যে আমাকে যেতে হলো, জীবনটা শেষ। বিআরটিএর ভেতরে তিন ও চার চাকার যানবাহনগুলো দাঁড়ানো ছিল ফিটনেস পরীক্ষার জন্য। এগুলোর সারি ঠেকেছে গেটের বাইরে পর্যন্ত। যানবাহনের মালিক-চালকদের চোখ-মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ। একটি টয়োটা এলিয়ন গাড়ির মালিক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বিআরটিএ এখনো দাদার আমলে পড়ে আছে। সিস্টেম আপগ্রেড করেনি। তা ছাড়া কী যে ধীরগতিতে কাজ করে বলার বাইরে। আমার কাজ সারতে সারতে মনে হচ্ছে রাত হয়ে যাবে। সিরিয়াল আগাতেই চায় না।

মিরপুর বিআরটিএতে মোট চারটি ভবন রয়েছে। প্রতিটি ভবনের সামনেই ভয়াবহ জটলা দেখা গেল। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে কুলোতে পারছিলেন না। টিনশেড ভবনের একজন কর্মচারী বলেন, দুপুরে চা-রুটি খেয়ে কাজ করতে হচ্ছে, ভাত খাওয়ার সময় পাইনি। ১২১ নম্বর কক্ষে সাতটি বুথ দেখা গেছে। এখানের অবস্থাও মারাত্মক। সাপের মতোন পেঁচিয়ে আছে কয়েকটি লাইন। এখানে ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটসংক্রান্ত কাজ করা হয়। এখান থেকে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন মোটরসাইকেলচালক শরীফ হোসেন। তিনি বলেন, অনেক দিন আগেই আমারটা হয়েছে। আলসেমি করে নেইনি। আসলে সড়ক পরিবহন আইনের ভয়ে এসেছি, শুনেছি অনেক জরিমানা দিতে হয়-বলেই মৃদু হাসেন শরীফ হোসেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads