প্রতিবেশী দেশের রাজ্যগুলোর মধ্যে সিকিম বোধহয় বাঙালির কাছে এখন সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ অনন্য তুষার শৃঙ্গরাজির অনবদ্য রূপ, উচ্ছল নদী ও ঝরনা, নয়নাভিরাম সরোবর, চোখজুড়ানো অর্কিড ও ফুল, নানা রঙের পাখি, গা ছমছমে অরণ্য— সব মিলিয়ে ছোট্ট রাজ্যটির এই বিপুল সম্ভার সারা বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তবে ছোট হলেও সিকিমের দর্শনীয় জায়গার সংখ্যা এতই বেশি যে, এক যাত্রায় সবকিছু দেখা দুঃসাধ্য।
গ্যাংটক
পাঁচ হাজার ৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক এক আধুনিক পাহাড়ি শহর। হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া, শপিং মল, অজস্র দোকানপাট— সব মিলিয়ে এক জমজমাট শহর। ‘মে-ফেয়ার’ ও ‘রয়েল প্লাজা’ হোটেলে ক্যাসিনো তো আছেই। আবার রোপওয়ে চড়েও আকাশপথে দেখে নেওয়া যায় গোটা শহর। ভালোভাবে গ্যাংটক দেখতে হলে হাতে দুটি দিন রাখতেই হবে। প্রথম দিনটি গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিন তাশি ভিউ পয়েন্ট, হনুমান টক, গণেশ টক, রুমটেক গুম্ফা, রাঙ্কা গুম্ফা, অর্কিড হাউজ, চোগিয়াল রাজবাড়ি, বনঝাকরি ঝরনা, ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজির মতো দর্শনীয় স্থানগুলো। হাতে যদি কিছুটা বেশি সময় ও দেখার আগ্রহ থাকে তবে ঘুরে নিতে পারেন ফ্যামবং-লো অভয়ারণ্য ও হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক (রেড পান্ডা, ব্ল্যাক বিয়ার, স্নো-লেপার্ডের মুক্তাঞ্চল)।
সাঙ্গুতে বরফের চাদর
দ্বিতীয় দিনটি রাখতে হবে জনপ্রিয় সাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির সফরের জন্য। সাঙ্গু লেকের (উচ্চতা ১২ হাজার ৪০০ ফুট) দূরত্ব গ্যাংটক থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। নীল জলের এই সরোবরটি বছরের অনেকটা সময়ই অবশ্য থাকে ধবধবে সাদা, অর্থাৎ বরফে ঢাকা। সাঙ্গু থেকে আরো ১৮ কিলোমিটার দূরে নাথুলায় রয়েছে ভারত-চীন সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারেই দেখা যাবে চীনের বাড়িঘর, টহলরত চীনা সেনা। নাথুলার উচ্চতা ১৪ হাজার ৪৫০ ফুট। ফেরার পথে চার কিলোমিটার (নাথুলা-গেট থেকে) উতরাই রাস্তায় গিয়ে দেখে নিন নতুন বাবামন্দির। দুর্ঘটনায় অকালমৃত পাঞ্জাব রেজিমেন্টের হরভজন সিংয়ের নামে এই স্মৃতিমন্দির। সেনাদের বিশ্বাস, হরভজনের আত্মা নাকি বিভিন্ন বিপদে এখানে ত্রাতার ভূমিকা নেয়। স্মৃতিমন্দিরে হরভজনের পোশাক, ছবি ইত্যাদি সযত্নে রক্ষিত আছে। সাঙ্গু, নাথুলা ও বাবামন্দির- তিনটি জায়গাতেই আছে ক্যাফেটেরিয়া।
যাওয়ার পথ
বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে গ্যাংটক। কিংবা কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়া উত্তরবঙ্গগামী যে কোনো ট্রেনে এসে নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে। সেখান থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। আবার বিমানে বাগডোগরা পৌঁছে সেখান থেকেও চলে আসতে পারেন ১২৪ কিলোমিটার দূরে গ্যাংটকে। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে আড়াই হাজার থেকে চার হাজার টাকা (গাড়ির মডেল অনুযায়ী)। সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার এনজেপি বা শিলিগুড়ি সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্টের শেয়ার ভিত্তিতে চলা গাড়িও নিতে পারেন। ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া গ্যাংটকের বাসও ছাড়ে।
গ্যাংটক থেকে সাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির (নতুন) সফরের গাড়ি ভাড়া (গাড়িতে আটজন যাবে এই ভিত্তিতে) পড়বে মাথাপিছু ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। সময় ভেদে অবশ্য যথেষ্ট হেরফের হয় এই ভাড়ায়। গ্যাংটক ও আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য সারাদিন গাড়ি রিজার্ভ করলে পুরো গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত আছে এমন দেশগুলোর নাগরিকদের সিকিম ভ্রমণের জন্য ভারতীয় সরকারের পূর্বানুমতি লাগে। বাংলাদেশের সঙ্গেও যেহেতু ভারতের সীমান্ত আছে, সে কারণে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যও অনুমতি নিতে হবে। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকে এ অনুমতি নেওয়া যাবে। তার জন্য সিকিম যাওয়ার কমপক্ষে এক মাস আগে অনুমতির জন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে। আর যে কোনো অপরিচিত জায়গায় যাওয়ার আগে সেখানকার আবহাওয়া, জীবনাচার সম্পর্কে ভালো করে জেনে যাওয়া উচিত। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় না।