মাড়ি ও দুধদাঁতের যত্ন

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

মাড়ি ও দুধদাঁতের যত্ন

  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ, ২০১৯

মা-বাবা অপেক্ষা করতে থাকেন কবে তার সন্তানের দাঁত উঠবে। কখনো কখনো মন খারাপ করেন দাঁত ওঠে না বলে। মনে মনে কল্পনা করতে থাকেন, নতুন দাঁত উঠলে কেমন দেখাবে, কেমন হবে হাসি! থাকে সংশয়; কী করতে হবে! পরিষ্কার করবেন, নাকি না। ব্রাশ করাতে হবে? ব্রাশ কী হবে? টুথপেস্টই বা কী হবে।

সাধারণত শিশুর দাঁত ওঠা শুরু হয় ৬ মাস বয়স থেকে। তবে ৩ মাস থেকে ১৫ মাসের যে কোনো সময় প্রথম দাঁতটি উঠতে পারে। তবে অনধিক ৩ বছরের মধ্যে প্রায় ২০ টি দুধের দাঁত উঠে যায়। যদিও  এই দুধের দাঁতগুলো ৬-৭ বছরের পরে পুনরায়  পড়ে যায়এবং স্থায়ী দাঁত তার জায়গা নিয়ে নেয়,  এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিদিন নিত্যনতুন খাবার খেয়ে পুষ্টি পূরণ করতে এর ভূমিকা অপরিসীম। সঠিকভাবে কথা বলতে শিখায় এই দাঁত। বাচ্চার মুখের গড়ন এবং হাসির সৌন্দর্য নির্ভর করে সুস্থ সবল দাঁত ও মাড়ির ওপর। দুধদাঁত মাড়ির গঠন ঠিক করে এবং পরবর্তী দাঁতগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও তৈরি করে। এই দাঁতগুলো যদি কোনো কারণে নষ্ট হয় অথবা সময়ের আগেই পড়ে যায়, তাহলে স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা, উল্টাপাল্টা হয়ে উঠবে। তাই দাঁতও মাড়ির যত্ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর দুধদাঁত উঠার সময় মাড়ি কিছুটা লাল হতে পারে, ফুলে যেতে পারে, ব্যথাও হতে পারে। অস্বস্তির জন্য সে খিটখিটে মেজাজের হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে। দাঁত ওঠার অস্বস্তির জন্য যে পাশে দাঁত উঠছে সে পাশের কান রগড়াতে পারে। শক্ত খাবার বা অন্য শক্ত কিছু চিবাতে চাইতে পারে। তবে দুধ দাঁত ওঠার সময় জ্বর, ডায়রিয়া বা বমি হয় না। এগুলো জনশ্রুতি। এরকম হলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। দাঁত ওঠার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি কাটানোর জন্য মাড়িতে হালকা ম্যাসাজ করা যেতে পারে। আসলে দুধদাঁত ওঠার আগে থেকেই মাড়ির যত্ন নেওয়া এবং দাঁত ওঠার সময় থেকেই এই দাঁতের বিশেষ যত্ন নেওয়া অতীব প্রয়োজন। কারণ দাঁত ও মাড়ি সুস্থ না হলে আপনার বাচ্চা সারা জীবন নানা সমস্যায় ভুগবে।

জন্মের প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু করুন। পরিষ্কার নরম কাপড় ভিজিয়ে মাড়ি আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করে দিন। এর জন্য টুথপেস্ট বা ব্রাশ প্রয়োজন নেই। তবে একদম প্রাথমিক ব্রাশ হিসেবে ভিতরে আঙুল ঢুকানো যায়, এরকম কিছু ব্রাশ পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন এক-দুবার পরিষ্কার করুন। জানি, হয়তো অবাক হচ্ছেন, দাঁত ওঠার আগেই মাড়ির যত্ন! সব শিশুই ২০টি দুধদাঁত নিয়ে জন্মায়! এই দাঁতগুলো মাড়ির নিচে আড়ালে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে জীবাণু সংক্রমণ এবং আঠালো প্লাক হতে পারে যা পরবর্তীতে দুধদাঁতকেও আক্রমণ করবে। তাই নিয়মিত মাড়ি পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দুধদাঁত ওঠার সময় থেকেই দাঁত ব্রাশ করানো শুরু করুন। ব্রাশ করানোর জন্য একটি নরম ও ছোট, সুন্দর ও আকর্ষণীয় ব্রাশ কিনে দিন। তাতে শিশুর দাঁত ব্রাশ করার আগ্রহ বাড়বে। দুধদাঁতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। তবে যতদিন পর্যন্ত কুলি করা না শিখছে ততদিন পর্যন্ত এক-দুটি মটর দানা পরিমাণ পেস্ট ব্যবহার করুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করা শেখান। দাঁত ব্রাশ করার সময় লক্ষ রাখুন এবং মনে করিয়ে দিন, টুথপেস্ট খেয়ে ফেলা যাবে না। দুই-তিন বছর বয়সের পর শিশুকে নিজে নিজেই ব্রাশ করতে দিন। একই ব্রাশ দুই বা তিন মাসের বেশি ব্যবহার না করা ভালো। অভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুর সঙ্গে সঙ্গে আপনিও ব্রাশ করুন। তাতে তার আগ্রহ অনেক বেড়ে যাবে আর অনুকরণপ্রিয় হওয়ার কারণে খুব তাড়াতাড়ি শিখেও যাবে।

প্রতিবার খাবারের পর পানি খাওয়ান এবং কুলি করতে শেখান, যাতে এমনিতেই দাঁত ও মাড়ি কিছুটা পরিষ্কার হয়ে যায়। বুকের দুধ বা অন্য খাবার খাওয়ানো অবস্থায় ঘুম পাড়াবেন না। এতে মুখে জমে থাকা বুকের দুধ বা খাবার জীবাণুর সংক্রমণ ঘটাবে। ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিন। দাঁত ও মাড়ির গঠনে এগুলো দরকারি উপাদান।

শিশুর সুস্থ দাঁতের বিকাশের স্বার্থে ফিডার দিয়ে খাওয়াবেন না, টিথার কিংবা চুষণি ব্যবহার করবেন না। চকোলেট এবং এ-জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব পরিত্যাগ করুন। এতে ক্যারিজ বা ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি কমবে। দুধদাঁত নড়া শুরু হওয়া মাত্রই তা তুলে ফেলার ব্যবস্থা নিন। মুখে দুর্গন্ধ হলে বা দাঁতে কালো দাগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কথায় আছে, বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। আশা করি এমনটি আপনার শিশুর বেলায় ঘটবে না।

 

ডা. অমৃত লাল হালদার

শিশু বিশেষজ্ঞ

শিশু ও নবজাতক বিভাগ

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads