বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী গ্রেপ্তার আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন নিহত রিফাতের বাবা।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় নিহত রিফাত শরীফের চাচা আবদুল আজিজ শরীফসহ পরিবারের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের বাবা বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকান্ড মামলায় মাস্টার মাইন্ড আসামী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ইতোমধ্যে পুলিশ যথাযথ প্রমাণসাপেক্ষে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার পর পুলিশ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে নয়ন বন্ডসহ ঘটনার সাথে জড়িত ১৬জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আসামী মিন্নিসহ সকল আসামিই ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে হত্যাকান্ডের সাথে নিজেজেদেরকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। মামলার সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এগিয়ে চললেও আসামি পক্ষের কেউ কেউ কোন প্রভাবশালী কুচক্রি মহলের ইন্ধনে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি আরো বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে একমাত্র বাদী ও রাষ্ট্রের উর্দ্ধতন কর্মকর্তরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অথচ কুখ্যাত আসামি পক্ষ মামলার গতি পরিবর্তন করার লক্ষ্যে অন্য সংস্থার দ্বারা মামলা তদন্ত করার ষড়যন্ত্রে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যা কোনভাবেই আসামি পক্ষ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিংবা তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করার এখতিয়ার রাখে না।
তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমার একমাত্র নিষ্পাপ ছেলে হত্যার তদন্ত নিয়ে কুখ্যাত খুনি মিন্নির বাবা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার যে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে, তাতে মামলাটির সুষ্ঠু ন্যায় বিচার থেকে আমি বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছি।
হত্যাকান্ডের শিকার রিফাত শরীফের বাবা আঃ হালিম দুলাল শরীফ বলেন, মিন্নির বাবা বরগুনা শহরের কুখ্যাত অত্যাচারী সুদখোর মোজাম্মেল হোসেন কিশোর নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির বিবাহের বিষয়টি গোপন করে বিবাহ বলবৎ থাকা অবস্থায় আমার ছেলের সাথে তার মেয়েকে বিবাহ দেয়। আমার ছেলের সাথে বিবাহ দেয়ার পরও মিন্নি নয়নের বাসায় যাওয়া আসা করতো। যা নয়নের মা অনেক গণমাধ্যমে বলেছেন।
এপ্রসঙ্গে দুলাল শরীফ আরো বলেন, প্রতারক কিশোর যদি তার মেয়ের বিবাহের তথ্য গোপন না করে তার মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিবাহ না দিতো তাহলে আজ আমার ছেলে এমন নৃশংস করুণ মৃত্যুর শিকার হতো না। আমার ছেলের হত্যাকান্ডের সাথে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। যা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসবে।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়ে দুলাল শরীফ বলেন, মিন্নির বাবা ও মাকে অনতিবিলম্বে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার করা হোক। তাদের গ্রেপ্তার করা হলে এই নির্মম হত্যাকান্ড সম্পর্কে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসবে।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার ছেলেকে হত্যার পিছনে মিন্নিই ষড়যন্ত্র করেছে। এর আগেও এসআই আসাদ, ওবায়দুল ও এএসআই সোহেল খান, নয়ন বন্ড ও মিন্নি চলতি বছরের ১১ মে আমার ছেলেকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে জেল হাজতে পাঠায়।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।