মাধবপুরের ৫টি চা বাগানে প্রতিদিন সকাল হলেই চোখে পড়ে শত শত নারী দল বেঁধে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। সাঁওতাল, মুণ্ডা, ভূমিজ, কল, তন্তুবায়, বাকতিসহ বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর নারীরা এ পেশায় জড়িত। তাদের সামাজিক রীতিনীতি, ধর্ম, কৃষ্টি, কালচার, জীবনাচরণ, বর্ণ, কথা বলার ঢং, কাজের নিখুুঁত বুনন আমাদের ঐতিহ্য ধারাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে। কিন্তু এসব শ্রমিক কতটুকু মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন? পোকামাকড়ের মতো ছোট্ট কুঁড়েঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঠাসাঠাসি করে কোনোরকম জীবন চালায়। কঠোর পরিশ্রমের ফলে নারীর বেশিরভাগই অপুষ্টিতে ভুগছেন।
জানা গেছে, এদের কারো অলস সময় কাটানোর সুযোগ নেই। ঘুম থেকে জেগে ঘরের কাজ সেরে পায়ে হেঁটে দল বেঁধে বাগানে যান তারা। দুপুরের খাবার খেয়ে নেন বাগানেই। খাবারে কী পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে এ সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। মুড়ি, চানাচুর, কাঁচা মরিচ, কাঁচা চা পাতা, পেঁয়াজ, আলু চটকিয়ে ভর্তা বানিয়ে রুটি দিয়ে তা খাচ্ছেন। সঙ্গে থাকে বোতল ভর্তি গরম লাল চা। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে ফের শুরু হয় পারিবারিক কাজ। রাতে খাবার শেষে চট-ছালা বিছিয়ে মশারিবিহীন অন্ধকার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। নারী চা শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস হলেও অনেক সময় দেখা যায় নবজাতক শিশুকে নিয়ে তারা কাজে যোগ দেন। শিশুদের গাছের নিচে রেখে তারা কাজ করেন। উপজেলার তেলিয়াপাড়া, সুরমা, জগদীশপুর, বৈকুণ্ঠপুর, নোয়াপাড়া চা বাগানের নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সকাল-সন্ধ্যা রোদবৃষ্টিতে বাগানের মধ্যেই কাজ করেন। কিন্তু স্বল্প মজুরিতে তাদের জীবন-জীবিকা চালানো অনেক কঠিন হয়ে যায়। বাগানের পক্ষ থেকে যেটুকু স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে অনেক শ্রমিক নানা রোগে আক্রান্ত। অর্থাভাবে চিকিৎসাও হয় না।
সমাজসেবা কর্মকর্তা সুলায়মান মজুমদার বলেন, ইউনিসেফের অর্থায়নে ২০১১ সাল থেকে বাগানে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বর্তমানে রাজস্ব খাত থেকেও পর্যায়ক্রমে চা শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্য ও সন্তানদের লেখাপড়ায় উপবৃত্তিসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাত সুলতানা বলেন, ২৩টি চা বাগানে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ চলছে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের জীবন মান আগের চেয়ে অনেকটা ভালো।