মাছচাষে মুক্ত জলাশয়ের ধারণা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। এই ধারণা পাল্টানোর নেপথ্যে কাজ করছেন আত্মকর্মসংস্থানে নিবেদিত এক শ্রেণির যুবক। সময়ের প্রয়োজনে তারা প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে স্বল্প পরিসরে খাঁচায় মাছচাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছচাষের এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বেশ কয়েকটি মৃতপ্রায় নদীতে দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে খাঁচায় করে মাছচাষের এ পদ্ধতি। দিন যাচ্ছে আর নদীতে বাড়ছে খাঁচা আর মাছচাষির সংখ্যা। শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শেখপুর বিলপদ্মা নদী, শিরুয়াইল ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীসহ বিভিন্ন স্থানের উন্মুক্ত জলাশয়ে চলছে খাঁচায় করে মাছচাষ এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোয় ক্রেতাদের কাছে এ মাছের চাহিদাও বেশ।
স্বল্প জায়গায় অধিক পরিমাণে মাছচাষ করা যায় এ পদ্ধতিতে। ছয়-সাত মাসেই এ মাছ বিক্রির উপযোগী হয়।
সরেজমিন গিয়ে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ চর পড়ে আলাদা হয়ে যায় অনেক দিন আগে। মূল নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকলেও নেই কোনো স্রোত। বৃহৎ এ জলাভূমিতে বড় বড় খাঁচায় করে চলছে মাছের চাষ। প্রথমে একটি খাঁচা নিয়ে চাষ শুরু করা হলেও বর্তমানে বেড়েছে খাঁচার সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে নানা প্রজাতির মাছের চাষও। এসব খাঁচার মাছ স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান চাষিরা।
খাঁচা পদ্ধতির এই মাছচাষিদের একজন তানজিল আহমেদ। তিনি জানান, প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করে একটি ফ্রেমে ত্রিশটি করে খাঁচা তৈরি করা হয়। প্লাস্টিকের ভাসমান ড্রামের মাধ্যমে দীর্ঘ এই খাঁচাগুলোকে ভাসিয়ে রাখা হয়। তিনি আরো জানান, প্রতিটি খাঁচার গভীরতা ৬ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। প্রতিটি খাঁচায় তিনি তেলাপিয়া জাতের মাছ চাষ করছেন। বছরের জুলাই মাসে ২ মিমি আকারের পোনামাছ কিনে খাঁচায় রাখেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম হলেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা খুচরা মূল্যে কেজি দরে বিক্রি হয় এ মাছ।
খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করতে পুকুরের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের জলাশয়ে একাধিক খাঁচা করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। এ ছাড়া একবারই বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হয়। মূলত খাঁচা তৈরিতেই বিনিয়োগের বেশি অংশ যায়। তবে দীর্ঘদিন এ খাঁচা ব্যবহার করা যায়। ত্রিশটি খাঁচার মাছের জন্য প্রতিদিন এক বস্তা করে (৫০ কেজি) খাবার লাগে। বাজারে কিনতে পাওয়া সাধারণ মাছের খাবারই এদের দেওয়া হয়।’
স্থানীয়রা জানান, মাছের বাজারে যে তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যায় তা এসব খাঁচায় চাষ করা। এ মাছ আকারে তুলনামূলক বড় ও সুস্বাদু। ফলে চাহিদাও বেশি।
শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, শিবচরের জলাশয়গুলোয় খাঁচা পদ্ধতিতে মাছের চাষ দিন দিন বাড়ছে। মূলত এভাবে চাষ করলে সঠিক পরিমাণে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ বাজারে বিক্রি করা যায়। এ কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছচাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে বলে জানান ওই মৎস্য কর্মকর্তা।