মাদারীপুরে ক্ষুধায় কাতর বানরের তাণ্ডব

পথচারীর দেওয়া মুড়ি কুড়িয়ে খাচ্ছে ক্ষুধার্ত বানর

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জীব ও পরিবেশ

মাদারীপুরে ক্ষুধায় কাতর বানরের তাণ্ডব

  • মো. জাকির হোসেন, মাদারীপুর
  • প্রকাশিত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বানরের উৎপাতে রীতিমতো দিশেহারা মাদারীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা। রান্নাঘরের সামনে লাঠি নিয়ে বসে থাকতে হয় তাদের। একটু এদিক-সেদিক হলেই চোখের পলকে পাতিলসহ গায়েব হয়ে যায় খাবার।

জানা গেছে, বানরকুলের জন্য মাদারীপুর জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের একটা খাদ্য কর্মসূচি ছিল। সে আওতায় এদের খাবার দেওয়া হতো। বছর দুয়েক হলো সে কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে জেলার দুই সহস্রাধিক বানর। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা এখন রীতিমতো বেপরোয়া। হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় খাবার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বানরের দল পৌর শহরের বিভিন্ন মহল্লার বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। চুরি করছে ঘরের খাদ্যসামগ্রী। ধ্বংস করছে গাছের ফল-ফলাদি, থাবা বসাচ্ছে স্কুলগামী শিশুদের টিফিনবক্সে। হাট-বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে মানুষের হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে। বাধা দিলে বা তাড়া করলে দল বেঁধে হামলা করে কামড়ে আহত করছে অনেককে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঘর থেকে বের হয়ে একা চলাফেরা করতে পারছে না। সুযোগ পেলেই কামড় দিচ্ছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। মোট কথা বানরের অত্যাচারে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

শহরের পাঠককান্দি, হরিকুমারিয়া, চরমুগরিয়া, খাগদি, পাকদি, থানতলী, পুরান বাজার, মাস্টার কলোনি, উকিলপাড়া, সরদার কলোনি ও নতুন শহর এলাকা এখন বলতে গেলে বানরের রাজ্য। জেলা বন বিভাগে সূত্রে জানা গেছে, একসময় মাদারীপুরে ১০ হাজারের বেশি বানরের বসবাস ছিল। পঞ্চাশের দশকেও জেলা সদরের সর্বত্র দল বেঁধে বানর বিচরণ করত। তখন কুলপদ্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বানরকে দেবতা মনে করে কলা, মোয়া, মুড়ি, চিঁড়া, খৈ, মুড়কি, বিস্কুট ও নানা প্রকার ফলমূল খেতে দিত। হিন্দু বসতি হ্রাস পাওয়ায় ও বনজঙ্গল উজাড় হতে থাকায় আস্তে আস্তে বানর সম্প্রদায় পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বন্দরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চরমুগরিয়া বন্দরে বানর ছিল প্রায় সাড়ে সাত হাজার। তখন চরমুগরিয়া জেটিসির মাঠে বানরদের জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ওইসব এলাকা ক্রমাগতভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন বানর খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। আশ্রয়হীন ও রোগাক্রান্ত বানরগুলো ক্ষীণকায় হয়ে মারা যেতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে বানরের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এরা তখন মারোয়াড়িদের জেটিসি, আদমজী, ইস্পাহানী, লতিফ বাওয়ানীসহ বিভিন্ন পাট কোম্পানির পরিত্যক্ত গুদাম, স্কুল-কলেজ, মানুষের বাড়িঘরের সানশেড, টিনের চালার নিচে কোনোরকম থাকতে শুরু করে। সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুরের তত্ত্বাবধানে একসময় এসব বানরের জন্য খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি চালু ছিল। কিন্তু এ কর্মসূচি বেশি দিন চালু রাখা হয়নি।

মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন সাহা বলেন, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১২ লাখ ১৯ হাজার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৭৮ হাজার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬১ হাজার, এরপর দুই বছর বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ থাকে। আবার ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দুই সহস্রাধিক বানরের জন্য খাদ্য বরাদ্দ ছিল। মাদারীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটানা ৭ বছর বানরের জন্য খাদ্য কর্মসূচি চালু ছিল। বর্তমানে বানরদের জন্য সকল প্রকার খাদ্য কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads