২০১৮-১৯ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মাইক্রোসফটের রাজস্ব এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৬০ কোটি ডলার এবং নিট আয় ১৯ শতাংশ বেড়ে ৮৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ক্লাউড, অফিস, উইন্ডোজ, এক্সবক্স, সার্চ বিজ্ঞাপন এবং সারফেস ডিভাইস ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির সুবাদে প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের পর গত বুধবার মাইক্রোসফট করপোরেশনের শেয়ারপ্রতি দর ১৩০ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়। এর সুবাদে প্রথমবারের মতো ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের কোম্পানি ক্লাবে নাম উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির।
মাইক্রোসফটের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ মার্চ সমাপ্ত প্রান্তিকে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় ১ ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির আয় শেয়ারপ্রতি ১ দশমিক ১৪ ডলারে পৌঁছেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির গ্রস মার্জিন বেড়ে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিভাগ থেকে রাজস্ব আয়ের চিত্র আলাদা করে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। গত প্রান্তিকে ঐতিহ্যবাহী প্রডাক্টিভিটি এবং বিজনেস প্রসেস ব্যবসা বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় ১ হাজার ২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ইন্টেলিজেন্ট ক্লাউড ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব আয় ৯৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া উইন্ডোজ, গেমিং এবং সারফেস ডিভাইস বিভাগের মতো পার্সোনাল কম্পিউটিং (পিসি) পণ্য থেকে রাজস্ব আয় ১ হাজার ৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মাইক্রোসফটের ইন্টেলিজেন্ট ক্লাউড ব্যবসা বিভাগের রাজস্বে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। অ্যাজার ক্লাউড প্রতিষ্ঠানটির এ বিভাগেরই অন্তর্ভুক্ত। ক্লাউড ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব ৪১ শতাংশ বেড়ে ৯৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে অ্যাজার ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগের রাজস্ব বেড়েছে ৭৩ শতাংশ।
ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশনের পাশাপাশি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল এবং ক্লাউডভিত্তিক অফিস ৩৬৫ স্যুট ঐতিহ্যবাহী প্রডাক্টিভিটি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। গত প্রান্তিকে অফিস ৩৬৫-এর বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
২০১৬ সালে ব্যবসা ও কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং সাইট লিঙ্কডইন অধিগ্রহণ করে মাইক্রোসফট। সেবাটির দ্রুত প্রসার ঘটছে। মাইক্রোসফটের অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে লিঙ্কডইন থেকে রাজস্ব বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
স্টিফেল, নিকোলাস অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জ্যেষ্ঠ ইক্যুইটি গবেষক ব্র্যাড রিব্যাক বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্লাউড প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সাধারণ ভোক্তা থেকে শুরু করে এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে ক্লাউড প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। এন্টারপ্রাইজ খাত ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির জন্য ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহারে ঝুঁকছে। ক্লাউড প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় দিক থেকে সাফল্যও পেয়েছে। গ্রাহক চাহিদা বাড়ায় মাইক্রোসফটের ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব বাড়ছে।
২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব নিয়েছিলেন সত্য নাদেলা। বৈশ্বিক হার্ডওয়্যার বাজারে পিছিয়ে থাকলেও নতুন সিইওর নেতৃত্বে মাইক্রোসফটের ব্যবসায় উল্লম্ফন ঘটতে শুরু করে। তিনি সিইওর দায়িত্ব নেওয়ার পরই ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসায় গুরুত্ব দেন। ক্লাউড প্রযুক্তি খাতে অ্যামাজনের বিপরীতে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েক বছর বহুজাতিক অন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মতোই ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনতে জোর দিয়ে আসছেন সত্য নাদেলা। যে কারণে উইন্ডোজ, এক্সবক্স কন্সোল ও সারফেস সিরিজের পণ্য থেকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় বাড়ছে।
বাজারমূল্যে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে অ্যাপল। এরপর অ্যামাজনও ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাবে নাম লেখায়। তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইক্রোসফট একই মাইলফলক স্পর্শ করল। অবশ্য আইফোন ব্যবসা নিয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা অ্যাপল এরই মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাব থেকে ছিটকে পড়েছে।