মুক্তমত

মহামারি ঠেকাতে ধনী দেশগুলোর অবদান কতটুকু

  • প্রকাশিত ২৯ জুন, ২০২১

জাফরুল ইসলাম

 

বর্তমানে পৃথিবী গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত। বিশ্ব এখন অসহায় আর এই অসহায়ত্বের মাত্রা দিন দিন গভীর হচ্ছে। কারণ সংকট যদি দীর্ঘদিন যাবৎ বিরাজ করে এবং তা সমাধান করা সম্ভব না হয়, তাহলে এই সংকট একসময় চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে দেখা দেয়। আমরা জানি বিশ্বে যতগুলো দেশ আছে তারা কিন্তু সবাই লিডার বা নেতা নয়। কারণ নেতা হতে গেলে দরকার হয় সামরিক শক্তি এবং অর্থের। যার কারণে যেসব দেশ অর্থনীতি এবং সামরিক দিক দিয়ে যত বেশি শক্তিশালী সেই দেশকে বিশ্বমোড়ল বলা হয়। আর যখন বিশ্ব কোন সংকটের দিকে ধাবিত হবে তখন এই মোড়লদেরকেই এগিয়ে আসতে হয়।

এই বিশ্বমোড়লদের তৎপরতায় এই দুৎসময়ে করোনা টিকা দ্রুতই আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু আজও তা বিশ্বব্যাপী কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আর কেন সম্ভব হয়নি সেটাও আমরা জানি। পৃথিবীতে বর্তমানে গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের যে স্নায়ুযুদ্ধ বিরাজমান সেটাই প্রধান কারণ। জি-৭ সম্মেলন যেটাকে বলা হয় বিশ্ব ভাগ্য-নির্ধারক সম্মেলন। কারণ এখানে বিশ্বের ধনী সাতটি দেশগুলোর অবস্থান। যারা ২০০২ সালে ম্যালেরিয়া এবং এইডস নামক সংকট মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। গত ১২ জুন এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে করোনা মহামারি প্রতিরোধ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা করেছে। এই সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামী বছরের মধ্য ১০০ ডোজ টিকা সরবরাহ করা হবে। এই ১০০ কোটির মধ্য যুক্তরাষ্ট্র ৫০ কোটি যুক্তরাজ্য ১০ কোটি টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে, বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহ করতে ২০২৪ সাল লেগে যেতে পারে। কিন্তু জি-৭ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে, টিকা সরবরাহ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ২০২২ সাল পর্যন্ত। যেখানে বিশ্বকে ঝুঁকিমুক্ত করতে ১ হাজার কোটি থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে। সুতরাং এই টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে রয়েছে সংশয়।

অন্যদিকে এই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে আড়াইশ কোটির মতো টিকা যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি কিনে রেখেছে জি-৭ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশের সাব-সাহারা অঞ্চলে টিকা পেয়েছে দুই শতাংশের কম। এখন করোনার টিকার ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্ব দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। একদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬টি ধনী দেশ, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়াসহ জি-২০ দেশগুলোর অবস্থান। জি-৭ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার জানতে পারলাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের স্নায়ুযুদ্ধের কথা। এ যুদ্ধ যে চলতেই থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, চীন বর্তমানে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। এছাড়াও রাশিয়ার সঙ্গে তো রাজনৈতিক সংকট বিরাজমান। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ৬টি দেশ যে টিকাগুলো মজুত করে রেখেছে সেগুলো যদি সরবরাহ না করা হয়, তাহলে কিন্তু ২০২২ সালের মধ্যে টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে টিকার জন্য চলতি বছরে অন্তত ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং আগামী বছরে আরো তিন হাজার কোটি ডলার জোগান দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জি-৭ সম্মেলনে। অথচ টিকা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে যে চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান তখনই সম্ভব হবে, যখন স্নায়ুযুদ্ধ ও রাজনৈতিক সংকট নিরসন করা যাবে। কারণ বৈরী সম্পর্ক বিরাজ থাকলে কোন কাজে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয় না। এদিকে চীন যে তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর কথা ঘোষণা করেছে, তাা নিয়েও আমেরিকার ক্ষোভ রয়েছে। কারণ চীনের এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে তার বিস্তার ঘটবে। আর যারা তার বলয়ে অবস্থান করবে, তাদের ওপর চীন ক্ষমতা বা প্রভাব বিস্তার করবে যা আমেরিকা কখনো হতে দেবে না।

এসব কারণে আমেরিকা এই সম্মেলনে চীনের প্রকল্পের বিপরীতে ‘বিল্ড বেটার ওয়ার্ল্ড’ উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এই যদি হয় বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর অবস্থান তাহলে বর্তমান করেনা মহামারির সংকট নিরসন করা দ্রুত যে সম্ভব হবে তা মনে করার কোনো কারণ নাই। তাই সংকট নিরসনে চাই সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক। বিশ্বের নাগরিকরা এখন প্রত্যাশা করছে, পরাশক্তিগুলো তাদের মধ্যকার সব বৈরীর অবসান ঘটিয়ে পৃথিবীর এই দুঃসময়ে একযোগে কাজ করবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads