মুক্তমত

মহামারিতে শঙ্কার বার্তা দিচ্ছে ডেঙ্গু

  • প্রকাশিত ৩ জুলাই, ২০২১

কাব্য সাহা

 

দীর্ঘ সময় করোনার প্রকোপে থমকে আছে পুরো দেশ। করোনার ঝুঁকিতে এখনো হাজারো মানুষ, এরপরও সবকিছু পেছনে ফেলে অবলীলায় চলছে নিয়ম না মেনে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা। যার ফলে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে সারা দেশে। এই মহামারির চলমান অবস্থায় পুনরায় যোগ হয়েছে ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গুর প্রকোপ। এখন পর্যন্ত ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী, যা মহামারীর এই সময়ে এক প্রকার অশনি সংকেত বলা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে জানা যায়, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮৭ জন। তবে এখনো ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

মূলত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। বেশ কিছুদিন পর্যায়ক্রমে বৃষ্টির ফলে এখন ডোবা, নর্দমা বা বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে। এর ফলে সৃষ্ট এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু মানুষের জন্য আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে এবং বর্তমান করোনা মহামারীতে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মানুষের অসচেতনতায় এর তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকিতে শুধু ঢাকা কিংবা শহর অঞ্চলগুলো নয়, রয়েছে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলও। সুতরাং প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এক্ষেত্রে আমাদের যা করণীয় তা হচ্ছে— বাসার আনাচে-কানাচে থাকা পুরনো বালতি বা ব্যবহারের অনুপযোগী জিনিস অপসারণ করা; ব্যালকনি বা ছাদে লাগানো ফুলের টব থাকলে, সেখানে পানি যাতে না জমে তা নজর রাখতে হবে; বাসায় অব্যবহূত কমোডের ঢাকনা বন্ধ রাখতে হবে; বাসার আশপাশে ময়লা-আবর্জনা বা পরিত্যক্ত কিছু থাকলে অপসারণ করতে হবে, যেন কোনোভাবে সেখানে পানি জমতে না পারে; বৃষ্টি হলে পানি জমতে পারে বা পানি বেরোতে অসুবিধা হলে তেমন জায়গা চিহ্নিত করে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে; বাসায় মশারির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে; এবং সর্বোপরি এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি থেকে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং  সতর্ক থাকতে হবে এই করোনা মহামারীকালে।

আমরা ডেঙ্গুর ভয়াবহতা গত ২০১৯ সালে দেখেছি। নানা মানুষের আক্রান্তের পাশাপাশি, সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল ১৭৯ জন। তাই করোনা মহামারির সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন না ছড়াতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো কিছুই ছোট করে দেখা বা অবহেলা করতে নেই। আমরা অনেকেই সবকিছু জানি, কিন্তু সঠিক প্রয়োগ বা নিয়মকানুন মানি না। তাই আক্রমণাত্মক হওয়ার আগেই সবাই প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমাদের জন্য ডেঙ্গু ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হবে না।

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সবাই আবার সচেতনতার কথাগুলো স্মরণ করি। যথারীতি বাসায় অবস্থান করে পরিবারের মানুষদের নিরাপদ রাখি। মেনে চলি সব নিয়মকানুন। তাহলেই কেবল আমরা সুস্থ দেশকে ফিরে পাব। নিজে সচেতন হই এবং নিয়ম মেনে চলি, পাশাপাশি অন্যকে উৎসাহিত করি তার সঠিক পথ অবলম্বনের জন্য। আবারো বলি— বাসায় থাকি, সুস্থ থাকি এবং পরিবার ও দেশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

kabbo.saha345@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads