মহররম বা আশুরার ফজিলত সম্পর্কে দুটি কথা

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

মহররম বা আশুরার ফজিলত সম্পর্কে দুটি কথা

  • প্রকাশিত ২০ অগাস্ট, ২০২১

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। কোরআনে বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং রজব। এই চার মাসে যুদ্ধবিগ্রহসহ সব পাপ কাজের প্রতি অন্য সব মাসের চেয়ে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে মহররমকে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। কোরআন এবং হাদিসে মহররম সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকার পরও বর্তমান মুসলমান সমাজ আশুরা এবং মহররমকে একত্রে গুলিয়ে ফেলে। মহররম বা আশুরা বলতেই অনেকে কারবালার কথা বুঝে থাকে। তবে প্রকৃত অর্থে মহররম এবং আশুরার মর্যাদা এবং ফজিলত কারবালার ঘটনার ৫০ বছর পূর্বেই কোরআন এবং হাদিস দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল।

২০২১ সালের মহররমের ১০ তারিখ বা আশুরা আগস্ট মাসের ২০ তারিখ। সুতরাং মহররমের রোজা রাখতে হবে ১৯, ২০ আগস্ট অথবা ২০ এবং ২১ আগস্ট। শুধু এই দুদিন নয়, সকলের এই মহররম মাসজুড়ে নফল ইবাদত বা যতটা সম্ভব বেশি নফল রোজা রাখা উচিত। কারণ এই মাসের নফল ইবাদতের ফজিলত অনেক। এ বছর মহররম মাসের আইয়ামে বীজের রোজা রাখার তারিখগুলো হলো ২৩, ২৪ এবং ২৫ আগস্ট।

মহররমের রোজা দুদিন রাখা উত্তম। সুতরাং মহররমের ১০ তারিখ একটি রোজা রাখা অনুচিত। অতএব মহররমের ৯ ও ১০ বা ১০ এবং ১১ তারিখ রোজা রাখাটা সবচেয়ে উত্তম। নবীজি হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহররম আল্লাহর মাস। তাই এই মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা উচিত। বেশি বেশি তওবা করা উচিত। কারণ অতীতে এই মাসেই কোনো এক গোত্রে তওবা কবুল করা হয়েছিল। দরুদ শরিফ বেশি বেশি পাঠ করা। কারণ দোয়া কবুলের অন্যতম নিয়ামক হলো দরুদ। এই মাসে সব পাপ বা গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

আশুরা শব্দের অর্থ দশম। ইসলামী পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। যেহেতু আশুরার দিন বা মহররমের ১০ তারিখ ইহুদিরাও রোজা রাখত। তাই মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) মহররমের ১০ তারিখে আগে বা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত-হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থ মাস মুজার গোত্রের রজব মাস। (বুখারি : ৪৬৬২, মুসলিম : ১৬৭৯)। হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ এই হাদিসের আলোকে আশুরার রোজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতীয়মান হয়। এমনকি ওই সময়ে এই রোজা ফরজ ছিল। বর্তমানে এই রোজা যদিও নফল, কিন্তু অন্যান্য নফল রোজার তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রোজা নিজে রেখেছেন এবং উম্মতকে রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আশুরার রোজার ফজিলত সম্বন্ধে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হজরত আব কাতাদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত-রাসুল (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম : ১১৬২)।

তবে আশুরার দিন হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে ভ্রান্ত শিয়া সম্প্রদায় ও নামধারী কিছু মুসলিম বিভিন্ন বিদাত ও শিরকি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তারা মনে করে আশুরা দিনের ফজিলত কেবল হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে। তাদের এ ধারণা নিতান্তই ভুল ও অজ্ঞতাপ্রসূত। ইসলামে আশুরা রোজা প্রবর্তন হয় দ্বিতীয় হিজরিতে, পক্ষান্তরে কারবালার প্রান্তরে হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতবরণ করেন ৬১ হিজরিতে। অধিকন্তু আশুরা দিনের ঐতিহ্য ও রোজার প্রচলন চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। অতএব, আশুরার সব মাহাত্ম্য কেবল হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতের কারণে, এ কথাটি কোরআন-হাদিসের ভাষ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।

মহররম মাস হিজরি সনের নববর্ষের মাস। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস এটি। তাই এই মাসে ইসলামের সঠিক ইতিহাস জেনে এবং কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইবাদত বন্দেগিতে শামিল হতে হবে। ভ্রান্ত ধারণা এবং শিরক থেকে মুক্ত থেকে আশুরা পালন করতে হবে। ইবাদত একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টির জন্য। তাই সেই ইবাদত যেন বিদাতে পরিণত না হয় সেজন্য মুসলিম উম্মাহর সচেতন হওয়া জরুরি।

লেখক : মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads