মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য মুখ

মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য মুখ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সরকার

মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য মুখ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ৬ জানুয়ারি, ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার শেষে কাল সোমবার মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রবীণ-নবীন মিলিয়ে অনেক নেতা অধীর আগ্রহ নিয়ে এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ফোনের অপেক্ষা করছেন।

সূত্র জানায়, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে যাচ্ছেন কারা কারা, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন সম্ভাব্যদের নিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে নিজের নাম দেখে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে অনেকে বুক বেঁধে মাঠে নেমেছেন। গণমাধ্যমের সংবাদে নাম প্রকাশ না হলেও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে অনেকেই মন্ত্রিত্ব পেতে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা চেষ্টা ও তদবির। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য খুলতে পারে, এমন আশা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ফোনের।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দুই কর্মকর্তা বাংলাদেশের খবরকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘মন্ত্রিত্ব কারা পাচ্ছেন বা হারাচ্ছেন, তা এর মধ্যে প্রায় নির্ধারিত। এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য আসেনি। জানা না গেলেও এরই মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ফাইল তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। গাড়িও প্রস্তুত রয়েছে পরিবহন পুলে। বঙ্গভবনের প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। আজকের মধ্যে অনেকের বিষয়ে জানা যাবে। প্রথমে বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব জ্যেষ্ঠ সদস্য পুনরায় স্থান পাচ্ছেন, তাদের ফোন করা হবে। এরপর নতুনদের ফোন দেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম গতকাল শনিবার বলেন, ‘সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে বলে আশা করছি। শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। তাই সংশ্লিষ্ট কাজগুলো গুছিয়ে রাখার জন্যই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করছি।’

জানা যায়, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ চলায় গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনও খোলা ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ছিলেন। তারা নতুন মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার ফাইল তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো সম্পন্ন করে রাখছেন। মন্ত্রিসভার কতজন সদস্যের জন্য ফাইল তৈরির কাজ চলছে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। তবে সোমবার ৪০ থেকে ৪৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বছরখানেক পর মন্ত্রিপরিষদের আকার বাড়িয়ে ৫৫ থেকে ৬০ করা হতে পারে বলেও জানায় সূত্র।

সূত্র জানায়, তোফায়েল আহমেদ বা আমির হোসেন আমু জাতীয় সংসদের উপনেতা হলে তাদের মন্ত্রণালয়ে (যথাক্রমে বাণিজ্য ও শিল্প) নতুন মুখ আসতে পারে। সংসদ উপনেতা না হলে তারা নতুন মন্ত্রিসভায়ও থাকছেন। মহাজোটের শরিক দলের মধ্যে যারা মন্ত্রিসভায় আছেন, তাদের কারো নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। ১৪ দল থেকে নতুন কেউ কেউ যুক্ত হতে পারেন বলেও প্রচারণা আছে। সদ্য সাবেক মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় সদস্য ছিলেন আইসিটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ধর্ম এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীরা। এসব মন্ত্রণালয়েও নতুন মুখ আসতে পারে। বস্ত্র ও পাট এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নতুন মুখের সম্ভাবনা বেশি।

অনির্বাচিত হওয়ায় বাদ পড়তে পারেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। যদিও ‘টেকনোক্র্যাট কোটায়’ মন্ত্রী হতে সংসদ সদস্যদের বাইরের কয়েক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। মহাজোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও রয়েছেন এ তালিকায়।

এবারের মন্ত্রিসভায় যাদের নাম নতুন করে যোগ হতে পারে, তাদের মধ্যে আছেন নরসিংদী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের নেতা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, ঢাকা-১০ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপস, গাজীপুর-৪ থেকে সিমিন হোসেন রিমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ থেকে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, দিনাজপুর-২ থেকে নির্বাচিত ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, চাঁদপুর-৪ থেকে নির্বাচিত সাংবাদিক নেতা মুহম্মদ শফিকুর রহমান, কুমিল্লা-৯ থেকে তাজুল ইসলাম, জয়পুরহাট-২ আসনে জয়ী ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কিশোরগঞ্জ-২ থেকে নূর মোহাম্মদ, চট্টগ্রাম-৯ থেকে নির্বাচিত ও প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রামের আরেকটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত মহাজোটের প্রার্থী ও জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল। তাদের মধ্যে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (১৯৯৬-২০০১) সাবেক একান্ত সচিব ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন এ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আর কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে দলের টিকিটে জয়ী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

নতুন করে মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার তালিকায় আছেন গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, টাঙ্গাইল-১ থেকে নির্বাচিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, চাঁদপুর-৩ আসনে নির্বাচিত ডা. দীপু মনি, চট্টগ্রাম-৭ আসনে জয়ী দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। মহাজোটের মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবার ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, চাঁদপুর-১ আসনে নির্বাচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও পাবনা-১ আসনে জয়ী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর মন্ত্রিসভার যোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সূত্র জানায়।

মন্ত্রিত্বপ্রত্যাশী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এবার মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে জাতিকে চমক দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নিরঙ্কুশ জয় ও টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের মতো বিশেষ অর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন মন্ত্রিসভা সাজানোর চিন্তাভাবনা চলছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় চমক থাকছে বলে জানান। মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে বলেও দলের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন, এ আশা জন্ম নেওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ফোনের অপেক্ষা করছেন বলেও জানান তারা। এখন সবার অপেক্ষা, কখন ফোনে কল আসবে আর বলা হবে- শপথ নেওয়ার জন্য ...টার সময় আপনাকে বঙ্গভবনে আসতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads