রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে নগদ আট কোটি টাকা জব্দ এবং তিনজনকে গ্রেফতারের পর র্যাব জানিয়েছে টাকাগুলো ‘একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট কেনার জন্য’ দুবাই থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিল থেকে এই নগদ টাকা ও দশ কোটি টাকার চেক উদ্ধারের পর এই টাকার সঙ্গে তারেক রহমানের সাবেক এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিতও দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

র্যাব শুরুতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭তলায় অভিযান চালিয়ে আমদানি-রফতানি ও ঠিকাদারি কোম্পানি ইউনাইটেড করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হায়দারকে গ্রেফতার করে। তার কাছে প্রায় আট কোটি টাকা এবং ১০ কোটি টাকার চেক পাওয়ার তথ্য দেন র্যাব সদর দফতরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান। সেখানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপুর নির্বাচনী পোস্টার পাওয়া যায়, যিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস। পরে দুপুরে গুলশানে অপুর কোম্পানি আমেনা এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জয়নাল আবেদীন ও অফিস সহকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের একজন হাওয়া ভবনের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন বলে দাবি করেছেন র্যাব কর্মকর্তারা।

এরপর মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭তলায় সংবাদ সম্মেলনে এসে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের চার দিন আগে ‘ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বানচাল করা হয়েছে’। তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় টাকা ছড়ানো হতো। সিটি সেন্টারের ২৭তলায় যেখানে অভিযান চালানো হয়েছে সেখানে ইউনাইটেড করপোরেশন ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রেফতাররা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই মাস আগে অফিসটি ভাড়া নেয়। গত দুই মাসে অফিস থেকে ১৫০ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ইউনাইটেড করপোরেশনের কথিত মালিকের গত এক মাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন এবং গত দুই মাসে এক কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়েছেন।

সিটি সেন্টারের ইউনাইটেড করপোরেশনের মালিক দুবাই প্রবাসী মাহমুদুল হাসান। ওই ভবনের একই ফ্লোরে থাকা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের মালিক আতিকুর রহমান ঝালকাঠি উপজেলার ছাত্রদলের সহসভাপতি। আমেনা এন্টারপ্রাইজের মালিক অপু।

বেনজীর আহমেদ বলেন, গতকাল (সোমবার) শরীয়তপুর-৩ আসনের মিয়া নূরুদ্দীন অপুকে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, ওই অঞ্চলে টাকা যাওয়ার পর ওখানকার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অপু একসময় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। দণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেক কয়েক বছর আগে লন্ডন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে গেলে তার সঙ্গে তখনো অপুকে দেখা গিয়েছিল।

ঢাকায় উদ্ধার অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে নূরুদ্দীন অপুর কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে তার প্রচার শিবির থেকে জানানো হয়েছে।

সোমবার গোসাইরহাটে নির্বাচনী প্রচারের সময় সংঘর্ষে আহত হন অপু। তার দাবি, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সংঘর্ষ বাধে।

গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে একজনের সঙ্গে হাওয়া ভবনের ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল’ বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবপ্রধান বেনজীর; তবে তার নাম বলেননি তিনি। তবে তার নাম জয়নাল বলে জানিয়েছেন পরিচয় গোপনে ইচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, আসন্ন নির্বাচন প্রভাবিত করতে লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছেন তারেক। এজন্য তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।

ক্ষমতাসীনদের এই অভিযোগের মধ্যে ঢাকায় বিএনপি প্রার্থী ‘মির্জা আব্বাসের কর্মী’ দুই ব্যক্তিকে টাকা ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করার পরদিন মতিঝিলে সিটি সেন্টারে অভিযানে যায় র্যাব।

বেনজীর আহমেদ বলেন, অফিসটিতে আমরা একটি আসনে ভোটারদের নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানাসংবলিত একটি তালিকা পেয়েছি। ধারণা করছি তাদের ভোট কেনার জন্য টাকাগুলো রাখা হয়েছে। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোট  কেনে, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের অর্থনীতির কী হবে, সেটা সবার অনুমেয়। জিজ্ঞাবাদের পর এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান বেনজীর আহমেদ।

র্যাব মহাপরিচালক আরো বলেন, ইউনাইটেড করপোরেশনে আমরা অনেক ক্যাশবই ও বিভিন্ন ধরনের স্লিপ, ভাউচার পেয়েছি। তবে গত দুই মাসের চিত্রটা পুরোপুরি পেলে আমরা জানতে পারতাম, আর কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাস দমন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে র্যাব জানিয়েছে।