পালাবদলের খেলায় নেচেগেয়ে উঠে প্রকৃতি। আর এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক চালচলন। গ্রীষ্মের পাল ছেড়ে প্রকৃতিতে উড়ছে বাদল দিনের পাল। আষাঢ়ের মন বুঝা বড় ভার। কারণ আষাঢ় মানে এই রোদের ঝলকানি, এই বৃষ্টির ঝাপটা। বাদল দিনে আপনার সাজ-পোশাক কেমন হতে পারে, সেসব জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। লিখেছেন - অরণ্য সৌরভ
‘দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ/পরো দেহ ঘেরি মেঘনীল বেশ।’ বর্ষাপ্রেমি রবীন্দ্রনাথের এই চরণের মতোই বর্ষার সাথে রয়েছে নীল রঙের এক গভীর সম্পৃক্ততা। সেজন্যই হয়তো বর্ষা এলেই হালফ্যাশন থেকে যাপিত জীবন সবকিছুই যেন ভেসে বেড়ায় বর্ষাস্নাত নীল ভেলায়।
কর্মক্ষেত্র থেকে আসার সময় হুট করে শুরু হলো বৃষ্টি। এই সময়ে পোশাক ভিজে গেলে কিংবা কাদা লাগলে শুকানোর সমস্যায় পরতে হয়। এছাড়া বৃষ্টিতে ভেজার পর ঠান্ডা লেগে হতে পারে অসুখ। আর ভেজা পোশাকে থাকলে তো সমস্যা আরো বেড়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা সমস্যায় ভুগতে পারেন বলে কি বাইরে বের হবেন না। বিষয়টা ঠিক তেমন নয়। বাইরে অবশ্যই বের হবেন। সেজন্য বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে সাজ-পোশাকের দিকে একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। এই সময় কোন পোশাকটি পরবেন, কেমন করে সাজবেন, পায়ের জুতা কেমন হবে কিংবা ব্যবহৃত অনুষঙ্গসহ নানান বিষয় নিয়ে আগে থেকেই ভাবতে হবে।
আকাশে আজ নীলের খেলা। গুমোট মেঘের আড়ালেই যেন এক পশলা বৃষ্টি। বৃষ্টিস্নাত হয়ে মাধবীলতা লজ্জায় নুয়ে পড়েছে। এ যেন বাদল দিনের চিরচেনা রূপ। বাইরে বের হবেন বলে তৈরি হতে গিয়ে কি নীল রঙের কোনো পোশাকের দিকে হাতটা বারবার যেতে চাচ্ছে? মানুষের মন এমনই। প্রকৃতির সাথে চায় নিজেকে মিলিয়ে নিতে।
বিশ্বরঙ’র কর্ণধার ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, নীল রঙ খুব সহজেই মনে শান্ত ভাব জাগিয়ে তুলে। নীল রঙ আভিজাত্য, শান্তি, একতা ও সম্প্রীতির ভাবও প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া নীল স্বপ্নদায়ক, স্রষ্টা, শিল্পী এবং উদ্ভাবকদেরও রঙ। নীল রঙ মস্তিস্কে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা মস্তিস্ককে শান্ত রাখে। তাছাড়া রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনের হার কমাতেও নীল রঙ সাহায্য করে। মূলত নীলকে বরণ করতেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ফ্যাশন ব্রান্ড বিশ্বরঙ আয়োজন করেছে ‘নীল উৎসব’র।
ডিজাইনার আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্ষার সাথে নীল একটু বেশিই সম্পর্কিত। বাদল দিনের প্রকৃতিতে নীল যেন নানানরূপে রঙঢঙে ফুটে ওঠে। হালফ্যাশনে বছরের পুরো সময় পোশাকে নীলের ছোঁয়া দেখা গেলেও বর্ষার সময় নীলটা বেশিই সম্পর্কিত। আর বর্ষার আকাশের রঙটাই তো নীল। সেজন্য বর্ষার পোশাকে কালচে নীল, ধূসর, আকাশি, ছাই রঙ, সবুজ-নীল, গাঢ় নীল, নেভি ব্লু, হালকা নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীলসহ নানান শেডের উপস্থিতির দেখা মিলে। আর নীল পোশাকে ভারী বা বেশি নকশার চেয়ে হালকা নকশাই মানায়, তাতে রঙটা বেশি নজর কাড়ে।
বিশ্বরঙ ‘নীল উৎসব’ উপলক্ষে শাড়ী, থ্রি-পিছ, সিঙ্গেল কামিজ, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, শার্ট ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে প্রকৃতি থেকে নেয়া নীল ফুলের অনুপ্রেরণায় ফ্লোরাল মোটিফ আর নীল, সাদা রঙের বিভিন্ন গ্রাফিক্যাল জ্যামিতিক ফর্মের অনবদ্য উপস্থিতি। পোশাকে নীলের পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক রঙের অনন্য ব্যবহার। এছাড়া গরমের কথা মাথায় রেখে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে আরামদায়ক সুতি, লিলেন, ভয়েল, স্লাব কাপড়। কাজের মাধ্যম হিসাবে এসেছে টাই-ডাই, ব্লক, বাটিক, এ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিনপ্রিন্ট ইত্যাদি।
এবারের বর্ষার ফ্যাশনের সেরা অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিতে পারেন নীল আঁচলের শাড়ি। নীল শাড়ির উজ্জ্বল জমিনে ফুটে থাকতে পারে বর্ষার রূপবৈচিত্র্য। নীল পোশাকে বর্ষার ফুল, মেঘলা আকাশ, লতাপাতা, রিমঝিম বৃষ্টিসহ বর্ষার নানান রূপ বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন। রঙকে প্রাধান্য দিয়ে পরতে পারেন একরঙা সালোয়ার-কামিজ, নীল শাড়ি, কুর্তি কিংবা টপসও। তরুণরা বর্ষায় নীল জিন্সের সঙ্গে পরতে পারেন হালকা শেডের নীল ফতুয়া, টি-শার্ট, হাফশার্ট। নীল রঙের শার্টে খেলা করতে দিতে পারেন বর্ণিল বুনো ফুলদের। কিংবা ধূসর, সবুজ, সাদা, আকাশি শার্টে থাকতে পারে গাঢ় নীল ফুলেল প্রিন্ট।
নীল শাড়ির সঙ্গে যেমন হবে সাজ:
বাদলা দিনে হালকা সাজকেই বেশি গুরুত্ব দেন রূপবিশেষজ্ঞরা। এ সময় পানিনিরোধক মেকআপ-সামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ জুলিয়া আজাদ। তিনি বলেন, প্রথমত ওয়াটারপ্রুফ মেকাআপের কথা মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া এই আবহাওয়ায় ভারি মেকআপ নেওয়াও ভালো না। এ সময় ফাউন্ডেশন ছাড়া মেকআপের সব উপকরণই হওয়া চাই শুকনো বা ম্যাট। বর্ষায় দিনে হালকা আর রাতে লাল, কফি, মেরুন, বাদামি, বেগুনি, পিচ রঙের লিপস্টিক বেছে নিতে পারেন। এই আবহাওয়ায় সাজসজ্জায় রাখার চেষ্টা করুন সাধারণ প্রসাধনী। কারণ সাধারণ সাজ না হলে বৃষ্টিতে ভিজলে ভোগান্তির অন্ত নেই। মেকাপের রঙ চারদিকে ছড়িয়ে পোশাকে লাগতে পারে। ফাউন্ডেশনের বেইজ হিসেবে হালকা হলদে ধরনের কমপ্যাক বা ফাউন্ডেশন বেছে নিতে পারেন। এতে স্বাভাবিক ভাবটা থাকবে। হালকা রঙের ম্যাট ব্লাশন গালে অল্প করে বুলিয়ে নিতে পারেন। চোখে আইশ্যাডো ব্যবহার না করে আই পেনসিল লাগিয়ে আঙ্গুল বা ব্রাশ দিয়ে মিশিয়ে নিতে পারেন। রঙের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন সবুজ, নীল, বেগুনি, বাদামি অনেক রং। ভুরু ঘন দেখাতে বাদামির সঙ্গে অল্প পরিমাণ কালো রঙের আইশ্যাডো মিশিয়ে ব্রাশ দিয়ে এঁকে নিতে পারেন। পাপড়িতে ঘন মাশকারার দিকে জোর দিন। পোশাকের সঙ্গে মেকআপে মিল রেখেও সাজতে পারেন।
কোথায় পাবেন
নামকরা ফ্যাশন হাউজগুলোতে ঢুঁ মারলেই খুঁজে পাবেন বর্ষার পোশাকের সন্ধান। বিশ্বরঙের ওয়েবসাইট www.bishworang.com এবং ফেসবুক পেজ bishworangfanclub এর মাধ্যমে অনলাইনে ঘরে বসেই কিনতে পারেন আপনার পছন্দের পোশাকটি। এছাড়া বিশ্বরঙের কাষ্টমার কেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮১৯-২৫৭৭৬৮, ০১৭৩০০৬৮০২৯ নম্বরে। আগামী পহেলা জুলাই থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত মাসব্যাপী বিশ্বরঙের সকল শোরুমে চলবে ‘নীল উৎসব’। তাছাড়া রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, মৌচাক মার্কেটসহ বেশকিছু শপিংমলে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন পছন্দের নীল পোশাক।
দরদাম
৮০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে পেতে পারেন কটন শাড়ি, ১৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকার মধ্যে এন্ডি সিল্ক, ৩০০০ টাকা থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে সিল্ক, ২০০০ টাকা থেকে ১৫০০০ টাকার মধ্যে মসলিন, ১৮০০ টাকা থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে জর্জেট, ব্লক ছাপার শাড়ি পাবেন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে শাড়ি পেতে পারেন। ফ্যাশন হাউস ছাড়াও অনলাইনে পেজে পেতে পারেন সহজেই। পেজগুলোতে পেতে পারেন ব্লক, বাটিক ও হ্যান্ড পেইন্টেডসহ এ সময়ের উপযোগী আপনার পছন্দের পোশাক।
মডেল: সাদিয়া ইসলাম মৌ
পোশাক ও ছবি: বিশ্বরঙ