• বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ | ২৭ চৈত্র ১৪৩১ | ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬
ভুট্টায় ভরা সবার ঘর, লালমনিরহাট স্বনির্ভর

লালমনিরহাট জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ভুট্টার বিকল্প নেই

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ভুট্টায় ভরা সবার ঘর, লালমনিরহাট স্বনির্ভর

  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট

লালমনিরহাট তিস্তা, ধরলা ও রত্নাই নদীবিধৌত বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তবর্তী একটি জেলা। এর আয়তন ১,২৪৭ বর্গকিমি। ভৌগোলিক কারণেই এ জেলা অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে। এ অঞ্চলের মাটি অনেকটা বালি মিশ্রিত ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় এ জেলায় ধান, পাট, ভুট্টাসহ নানা রকম শাক-সবজি উৎপন্ন হলেও তাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন সম্ভব হয়নি। অতঃপর নব্বইয়ের দশক থেকে এ জেলায় শুরু হয় ভুট্টা চাষ। সময়ের পরিক্রমায় এ জেলায় কৃষিজ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষিতে আজ এক বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। বর্তমান লালমনিরহাটে উৎপাদিত শস্যের মধ্যে ভুট্টা অন্যতম। ভুট্টা চাষের ফলে এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনমানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। স্থানীয়রা তাদের ব্যক্তিগত কার্যক্রমের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ভুট্টা চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে— শ্রম ও অর্থ ব্যয় কম হলেও প্রাপ্তি অনেক বেশি। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাই বলা যায়, লালমনিরহাট জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ভুট্টার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের উত্তরে রংপুর বিভাগের সীমান্তবর্তী অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা লালমনিরহাট। লালমনিরহাট জেলার নামকরণ সম্পর্কে দীর্ঘ চারশ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করেও এর কোনো সঠিক উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনেকের মতে, মাটির নিচে জমানো লাল পাথরের প্রাচুর্য থেকেই লালমনিরহাট নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ বলেন, জেলার কাশিমবাজারে মহারাজা কুঠি ছিল। মহারাজার মা কিংবা মেয়ের নাম লালবিবি। তার নামানুসারে লালমনিরহাট নামকরণ করা হয়েছে। অনেকেই আবার বলেন, লালমনি নামক একজন বৃদ্ধ বিধবার কাছ থেকে রেল স্টেশন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যার জন্য লালমনিরহাট স্টেশন নামকরণের সঙ্গে সঙ্গে এই শহর লালমনিরহাট নামে পরিচিতি পায়। তৎকালীন রংপুর জেলা দুটি মহকুমায় বিভক্ত ছিল। একটি রংপুর সদর, অপরটি ভবানীগঞ্জ (বর্তমান গাইবান্ধা)। তখন এই জেলার সব থানা ছিল রংপুর সদর মহকুমার অধীন। অতঃপর ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম মহকুমাধীন লালমনিরহাট থানাকে কেন্দ্র করে কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম থানা নিয়ে লালমনিরহাট মহকুমার সৃষ্টি হয়। ১৯৮১ সালের ১০ এপ্রিল আদিতমারী উপজেলার সৃষ্টি। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটকে জেলা ঘোষণা করা হয়।

জেলার আয়তন ১ হাজার ২৪১ দশমিক ৪৬ বর্গকিলোমিটার। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা। দক্ষিণে রংপুর জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা। পশ্চিমে নীলফামারী ও রংপুর জেলা। এ জেলার নদী তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান উল্লেখযোগ্য। রেলওয়ে বিভাগীয় শহর লালমনিরহাট। বুড়িমারী আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরসহ ১৮৭ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এ জেলাকে ঘিরে রেখেছে। বহুল আলোচিত তিনবিঘা করিডোর ছাড়াও তিস্তা নদী বয়ে গেছে এ জেলার ওপর দিয়ে এবং দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের অবস্থানও লালমনিরহাটে। লালমনিরহাটকে ছিটমহলবেষ্টিত জেলা বলা হতো। এ জেলায় ৩৩টি (বিলুপ্ত) ছিটমহল ছিল, যার আয়তন ১ হাজার ৮০৭ হেক্টর। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় এখানকার বাসিন্দারা। মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টর ছিল লালমনিরহাটে। তাই যুদ্ধ চলাকালীন রংপুরের মধ্যে লালমনিরহাট ছিল পাকিস্তান বাহিনীর টার্গেট। এছাড়া লালমনিরহাট ছিল তিস্তা নদীর পূর্বপাড়ে এবং অধিকাংশ এলাকা ছিল ভারতের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আসামের সীমান্ত সংলগ্ন। সীমান্তবর্তী এ জেলা নানান দিক থেকে গুরুত্ব বহন করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads