মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, স্পটিফাই, নেটফ্লিক্সসহ বিভিন্ন বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত মেসেজসহ অন্যান্য তথ্য প্রদানের নতুন অভিযোগ উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নীতিতে উল্লিখিত তথ্যের বাইরেও অনেক তথ্য এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিয়েছে ফেসবুক। শুধু তাই নয়, নেটফ্লিক্স এবং স্পটিফাইকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজ দেখার পাশাপাশি সেগুলো মুছে দেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল। শুধু এ দুটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নয়, একই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল রয়্যাল ব্যাংক অব কানাডাকেও। অথচ এসব কিছুই করা হয়েছে ব্যবহারকারীদের অগোচরে।
এছাড়া ব্যবহারকারীদের বন্ধু তালিকায় থাকা অন্য ব্যবহারকারীদের ইমেইল ঠিকানা পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল মাইক্রোসফট, সনি ও অ্যামাজনকে। স্মার্টফোনের জন্য বিশেষ ফিচার তৈরি করতে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল অ্যাপলকে। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমসকেও ব্যবহারকারীদের তথ্য পেতে বিশেষ সুযোগ দিয়েছিল ফেসবুক।
মূলত ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নীতি বাইপাস করে এসব সুযোগ করে দিয়েছিল ফেসবুক। এর ফলে ব্যবহারকারীর তথ্য কোথায় এবং কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে ব্যবহার করছে, সেটি জানার কোনো সুযোগই ছিল না।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে ফেসবুক বরাবরের মতোই বলছে অনুমতি নেওয়ার কথা। এক বিবৃতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি জানিয়েছে, ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্যই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়নি। এছাড়া ২০১২ সালে ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে করা চুক্তির কোনো লঙ্ঘন এক্ষেত্রে ঘটেনি বলে দাবি করেছে ফেসবুক।
নেটফ্লিক্স এবং স্পটিফাইকে ইনবক্সে থাকা মেসেজ পড়া ও মুছে ফেলার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, স্পটিফাই অ্যাপ থেকে কোনো ফেসবুক বন্ধুকে মেসেজ পাঠানোর জন্য তাদের ‘রাইট অ্যাকসেস’ দিতে হয়েছে। এছাড়া একই অ্যাপ থেকে মেসেজ পড়ার জন্য দিতে হয়েছে ‘রিড অ্যাকসেস’ ও মুছে ফেলার জন্য ‘ডিলিট অ্যাকসেস’। এক্ষেত্রে স্পটিফাই ব্যবহারকারীর কোনো মেসেজ পড়েনি কিংবা ডিলিট করেনি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে অন্যান্য অ্যাপ থেকেও ফেসবুক তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে জার্মানিভিত্তিক ওয়েবসাইট মোবাইলসিশার। ওয়েবসাইটটির বরাত দিয়ে বাজফিড জানায়, টিন্ডার, ওকেকিউপিড, গ্রিন্ডরসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য তুলে দিচ্ছে ফেসবুকের কাছে। এ তালিকায় আরো আছে স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাপ প্রেগনেন্সি প্লাস, মাইগ্রেন বাডি, ধর্ম বিষয়ক অ্যাপ মুসলিম প্রো, বাইবেল প্লাসও। অ্যাপগুলোতে থাকা ফেসবুক এসডিকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আছে আইপি ঠিকানা, অ্যাপের তালিকা, ডিভাইসের তথ্যসহ আরো অনেক কিছু। মূলত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লগইনের সুবিধা দেওয়া এবং অ্যানালিটিকস ফিচারের জন্য অ্যাপ ডেভেলপাররা ফেসবুক এসডিকে ব্যবহার করে থাকেন।
মামলা করল ওয়াশিংটন ডিসি
ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল। নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ মামলাটি করা হয়।
মামলার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্ল র্যাসিন জানিয়েছেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের তথ্য কে কীভাবে ব্যবহার করছে তা জানার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করেছে। অনুমতি ছাড়াই তাদের তথ্য ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকাসহ অন্যান্য থার্ড পার্টি অ্যাপকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে ব্যবহারকারীদের ঝুঁকিতে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর মাধ্যমে ফেসবুক ওয়াশিংটন ডিসির বিদ্যমান কনজ্যুমার প্রটেকশন প্রসিডিউর অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় আরও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির পক্ষ থেকে এবং প্রয়োজনে জরিমানার আবেদনও করা হয়েছে।