ফিচার

ব্লগারদের জন্য পাঁচ পরামর্শ

  • প্রকাশিত ২১ জুন, ২০২১

ইন্টারনেটে মত প্রকাশ, বিভিন্ন ধরনের তথ্য শেয়ার ও ডেইলি লাইফের নানান দিক নিয়ে আলোচনা করার অন্যতম একটি জনপ্রিয় স্থান হলো ব্লগিং (Blogging)। বর্তমানে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা যায় বলে এর চাহিদা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। যে-কোন শ্রেণি-পেশার মানুষ যে-কোনো জায়গা থেকেই ব্লগিং শুরু করতে পারে। আজ আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।

 

ব্লগিং কী : ব্লগ মূলত ইংরেজি একটি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ ভার্চুয়াল ডায়েরি কিংবা ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত দিনলিপি। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে কোনো বিষয়কে পাঠকের মতামত প্রদানের জন্য তুলে ধরাকে ব্লগিং বলা হয়। ব্লগিং বিষয়টা যদি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলব, বিভিন্ন ব্লগে বা ওয়েবসাইটে যা লেখালেখি হয় তাই হলো ব্লগিং। ব্লগিং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হতে পারে; যেমন রাজনীতি, সাহিত্য, টেকনোলজি, ভ্রমণ কাহিনী, আপনার জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা, একটি ডায়েরির মতো সবকিছু গুছিয়ে রাখা এবং তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান সম্বন্ধে লেখা ইত্যাদি।

 

ব্লগার কে : সাধারণত যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলা হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নেন। এছাড়া সাম্প্রতিককালে ব্লগিং, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে।

 

প্রকারভেদ : ব্লগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ব্যক্তিগত ব্লগ, নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ব্লগ (যেমন টেকিব্লগ, ফটো ব্লগ, আর্ট ব্লগ, ভিডি ও অডিও গানের ব্লগ, বিনোদনমূলক ব্লগ ইত্যাদি), কোম্পানি বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগ, সামাজিক ব্লগ ইত্যাদি।

 

কেবল নিজের থাকুন :

আপনি শুধুই নিজের। নিজের হওয়ার চেষ্টাই সব সময় করুন। নিজের চিন্তাভাবনা, চেতনার কথা বলুন। অন্য কাউকে কখনো ফলো করার চেষ্টা না করে বরং নিজের মনের মতো গুছিয়ে নিন। নিজের বুদ্ধি, ভাবনায় নিজের মধ্যে থাকুন এবং নিজের মনের সমুদ্রে সাঁতার কাটুন। কথায় বলে, নিজের বুদ্ধিতে ফকির হওয়াও উত্তম। সব সময় নিজেকে প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করুন। কেবলই নিজের জন্য কণ্ঠ ছাড়ুন। যখন ব্লগে লিখবেন বা ব্লগের মাধ্যমে পরামর্শ দেবেন, তখন নিজের ভেতরকার ভালোবাসার কথা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখুন। যেন লেখায় সততা খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি যা নিয়ে উৎসাহী এবং সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেসব বিষয়ে লিখুন। কখনো অন্যের ভাবনা, স্টাইল, পরামর্শ কপি (অনুলিপি) করতে চেষ্টা করবেন না। এ থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন। আপনার নিজের স্টাইল, ভাবনাচিন্তা, পরামর্শ, ভালোলাগা, মন্দলাগা খুঁজে বের করুন। তারপর সেগুলোই লেখায় নিয়ে আসুন। ব্লগে যুক্ত করুন। মনে রাখবেন, কপি করা কোনো কিছুই নিজেকে, পরিবার, সমাজ, দেশ কিংবা বিশ্ব কাউকেই পরিবর্তন করতে পারে না।

সত্যিকার অর্থেই আগ্রহী এমন কিছু সম্পর্কে লিখতে চেষ্টা করুন-স্থান, টিপস, উপায় ইত্যাদি নিজের মতো। এমন ভেবে লিখুন, যেন আপনার মতো কেউ নেই। আপনি সম্পূর্ণ আলাদা। আপনার গল্প, কথা বলা, মতামত, সুর, কণ্ঠস্বর, এমনকি রসিকতা সবই অনন্য। ভিন্নতর। আলাদা। যেন অন্য কেউ এখান থেকে কিছু শিখতে পারে, নিতে পারে, কাজে লাগাতে পারে। সর্বপ্রথম আপনার কাজ হলো, আপনি কে? তা খুঁজে বের করা।

 

সামঞ্জস্যপূর্ণ বা ধারাবাহিকতা :

স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ধারাবাহিকতা পছন্দ করে। সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু খুঁজে ফেরে। সেজন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। নিয়মিত লেখার সাথে জড়িয়ে থাকুন। কাজের সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে রাখুন। দুদিন করলেন, তারপর ছুটি। আবার শুরু, কিছুদিন পর আবার উধাও-এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। পাঠক নিয়মিত আপনাকে পেলে, সেই পাঠকগুলো সব সময়ই আপনার কাছে থাকবে। এছাড়া আপনি ছয়নয় করলে পাঠক বিরক্তবোধ করবে, তখন আর পাঠক খুঁজে পাবেন না। এছাড়া আপনার ওপর থেকে বিশ্বাস উবে যাবে। একজন ব্লগারের জন্য এটি সত্যিই মন্দ দিক। ব্লগিং কখনোই একটি পোস্ট দিলেই হয়ে যায় না। এটির ধারাবাহিকতায় পাঠক সমাজে আপনার পরিচিত হয়ে উঠবে।

সেজন্য চালিয়ে যান, কথা বলতে থাকুন। যত ছোট কিছুই হোক না কেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। সেরকম পদক্ষেপ নিয়েই ব্লগিং করুন। ধারাবাহিকভাবে এক বছর কাজ করে যেতে পারলে, তারপর নিজের দিকে তাকালে নিজেই বুঝতে পারবেন কতদূর এগিয়েছেন। যে বিষয় বা পণ্য নিয়ে কাজ করেন, তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে নিয়মিত কাজ করার চেষ্টা করুন। যা লেখেন কিংবা যে বার্তা দিতে চান তাতে সৎ থাকুন। নির্ভুল ও তথ্যবহুল লেখা দিন। যদি এই কাজগুলো করতে পারেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অর্থ (টাকাপয়সা) এবং ব্যবসায়ের দিকটি উন্নতি হতে শুরু করবে।

খেয়াল রাখতে হবে, নির্ভুলতা ও ধারাবাহিকতার দিকে। ভুল তথ্য সমৃদ্ধ যতই ভালো লিখুন না কেন, তাতে কোনো কাজ হবে না। আপনাকে নির্ভুল, সত্য, তথ্যবহুল বিষয়বস্তু তৈরি করতে হবে। কারণ কখন কোন পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যেতে পারে তা আপনি জানেন না। ভাইরালের মাধ্যমে ট্রাফিকের সংখ্যার বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি সাইটে পর্যাপ্ত পোস্ট না পায়, নির্ভুল ব্লগ না পায় তাহলে পাঠকদের হারাতে হতে পারে। এই কারণেই ধারাবাহিক ব্লগিং প্রেফেশনাল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার মূল চাবিকাঠি।

 

নাছোড়বান্দা থাকুন :

ধারাবাহিক হওয়ার পাশাপাশি, ব্লগিংয়ের মাধ্যমেই ক্যারিয়ার গড়বেন সেরকম নাছোড়বান্দা মনোভাবও রাখার চেষ্টা করুন। কাজের এবং ক্যারিয়ারের প্রতি এরকম অবিরাম থাকতে পারলে ভালো একটি ফলাফল ধরা দেয়।

একটি ভালো ব্লগ তৈরি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। সাবধান! কখনো এটাকে সহজ মনে করবেন না। এটাকে সহজ ভেবে কাজে নেমে পড়বেন না। তাড়াহুড়ো কোনো কাজের সাফল্য বয়ে আনে না। সেজন্য সময় নিয়ে, ধীর এবং স্থির ভাবে সামনে এগুতে থাকুন। সফলতা আসতে সময় লাগতে পারে, সেজন্য ভেঙ্গ পরবেন না বা হতাশ হবেন না। লেগে থাকুন। নাছোড়বান্দা হোন। প্রতিনিয়ত কাজ করতে করতে অনেক কিছুই শিখে যাবেন। নতুন নতুন আইডিয়া এবং কাজ করার শক্তি খুঁজে পাবেন। সেজন্য চালিয়ে যান এবং শিখতে থাকুন। হতাশ হয়ে পড়লে, কিছুটা সময় থামুন, তারপর আবার নতুন উদ্দম্যে শুরু করুন। সফলতা ধরা দিবেই। যদি ব্লগিং করেই অর্থ উপার্জন করতে চান বা ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে যাই হোক না কেন চালিয়ে যেতেই হবে। মনে রাখবেন, অর্থ উপার্জন শুরু করার আগে অবশ্যই কাজে সময় দিতে হবে। এছাড়া সফল হওয়া আর কোনো পথ নেই।

 

শুরু করুন, সফল হোন :

লাফ দিয়ে নয়, বরং ধীরগতিতে সাফল্যকে ধরতে চেষ্টা করুন। শুরু না করেই নানান চিন্তা-ভাবনায় পরে যাবেন না। সফল ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে হা-হুতাশ করবেন না। শুরু করুন এবং কাজে লেগে থাকুন। একটা সময় সফল হবেনই। অনেকেই ব্লগিং শুরু করতে চায়। কিভাবে যথেষ্ট ভালো করা যায়, সফল হওয়া যায়, তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়, এসব নিয়ে ভীষণ চিন্তিত থাকেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠিত ব্লগারদের সাথে নিজেদের তুলনা করে। আপনি যদি শুরু না করেন, এসব ভাবনায় মজে থাকেন; তাহলে কেবল ভাবনাতেই থাকতে হবে। সফল আর হতে পারবেন কিনা সন্দেহ। সেজন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে শুরু করুন, যাই হোক না কেন।

যে কাজেই যিনি সফল হয়েছেন, এমনেই এমনে সফল হয়ে যায়নি। তাদের নিজস্ব পথে কাজে লেগে থেকে বা  এগিয়ে যাওয়ার নিজস্ব স্বতন্ত্র পথ খুঁজে পেয়েই সফল হয়েছে। মনে রাখবেন, তারা সকলেই কিছু না কিছু দিয়ে শুরু করেছিল। কোন ব্লগ, পাঠক, ট্রাফিক কিংবা তাদের ভবিষ্যতে কি রয়েছে সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই; তবুও তারা শুরু করেছিল। আর শুরু করেছিল বলেই সফল হতে পেরেছেন।

 

অর্থপূর্ণ বা অর্থবোধক কিছু করুন :

শেষ পর্যায়ে বলব, যা কিছুই করুন না কেন অবশ্যই অর্থপূর্ণ কিছু করুন। কারণ সেটির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। পাঠকদের ধরে রাখতে অর্থপূর্ণ হূদয় স্পর্শ করার মতো আর্টিকেল যত বেশি দিতে পারবেন পাঠকের সংখ্যা তত বেশিই আপনাকে অনুসরণ করতে শুরু করবে। অর্থ উপার্জন, ব্যবসায় রুলস মানা, অন্যদের সাহায্য করা, অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে বা সৃজনশীলতা দেখাতেও ব্লগ করতে পারেন। এই ধারণাই আপনাকে সফলতার পথে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads