জীব ও পরিবেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাইসমিলের ধোয়া-কালো পানিতে হুমকির মুখে পরিবেশ-জীববৈচিত্র

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১১ মে, ২০২৩

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুইটি অটোরাইস মিল থেকে নির্গত ধোয়ার সাথে ছাই এবং দূষিত কালো পানিতে হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। রাইসমিলটির ছাইয়ে পার্শ্ববর্তী একটি খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমিও। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরেও লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রামের বাসিন্দরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা গ্রামে আলম ব্রাদার্স এগ্রো ফুড ও এস. আলম এগ্রোফুড নামে দুটি অটো রাইসমিল স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্থাপিত মিল দুটি থেকে ছাই ও ধোয়া বাতাসের সাথে উড়ে গিয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকাগুলোতে। এতে গ্রামের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ধোয়া ও ধূলার কারণে গ্রামের শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।
এছাড়া মিলের গরম পানি ও ছাই পার্শ্ববর্তী খালে প্রবাহিত করায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল। এই গরম পানি ও ছাইয়ের কারণে কৃষি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে মিল মালিকদের অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার মিলছে না। উল্টো মিল মালিকদের পক্ষে প্রভাবশালী একটি চক্র গ্রামের বাসিন্দাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন খড়িয়ালা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি একটি খালের পাশে রাইসমিল স্থাপন করা হয়েছে। খালটিতে পোড়া ধানের কালো ছাইয়ের স্তূপ জমে ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে কৃষকরা চাষের কাজে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। এছাড়াও মিলের ছিমনি দিয়ে অনবরত নির্গত হচ্ছে কালো ধোয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফরিদা বেগম জানান, তিনি ৩৭ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছিলাম, কিন্তু মিলের ছাইয়ের কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমার জমিই নয় খালের পাশে থাকা অনেক জমির ধান এখন হুমকিতে। এখানে একটি ডোবা আছে- এটিতে চাষের জন্য মাছ ফেলা হলে সেগুলো মারা যায়।
আরেক বাসিন্দা রাকিব মিয়া জানান, মিলের ধোয়া ও ছাইয়ে গ্রামের মানুষের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। সাদা কাপড় পরে থাকা যায়না। এছাড়া যে খালটি ছাইয়ের কারণে ভরাট হয়ে গেছে- সেটি মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত। কিন্তু ভরাটের কারণে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না খালে।
মো. ফয়সাল নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, কৃষকরা জামি চাষ করার জন্য খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এতে করে জমিগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। আমরা খালটিকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলম ব্রাদার্স এগ্রো ফুড ও এস. আলম এগ্রোফুডের সত্ত্বাধিকারী আলম মিয়া বলেন, আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও আছে। আমরা পরিবেশের সকল নিয়ম মেনেই মিল পরিচালনা করছি। অভিযোগকারীরা অন্য বিরোধের জেরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খালেদ হাসান বলেন, রাইসমিলের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। সরেজমিন ঘটনাস্থল গিয়ে অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads