ব্যাংক

ব্যাংকগুলোকে বাড়াতে হবে দরিদ্র সহায়তা

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল, ২০২১

কোভিড-১৯ মহামারীতে দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের পাশাপাশি মানবেতর জীবনযাপন করছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে তাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ডের পাশাপাশি নিট মুনাফা থেকে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে অর্থ দিয়ে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৬ এপ্রিল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের পাশাপাশি যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কিংবা গ্রামে গিয়ে আটকা পড়েছেন তাদের সহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তারা সিএসআর খাতের সাথে নিট মুনাফার ১ শতাংশ যুক্ত করে অতিরিক্ত এই অর্থ সহায়তা প্রদান করবেন।’

ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অসহায় জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া জরুরি। তবে অতিরিক্ত এই ব্যয় ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল এই তিন বছরের মধ্যে সিএসআর খাত থেকে সমন্বয় করার কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত ব্যয়কৃত এসব অর্থ আগামী তিন বছর সিএসআর খাত থেকে ফেরত নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদ হতে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ জুনের মধ্যে ব্যয় করতে হবে এবং সিএসআর খাতে বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ স্থানান্তর নিশ্চিত করে আগামী ১৫ মে’র মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হবে।

আর বিশেষ সিএসআর সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে সেটার প্রতিবেদন ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক বরাবর দাখিল করতে বলা হয়েছে।

তবে এই বিশেষ এই অর্থ সহায়তা কীভাবে কোন কোন খাতে ব্যয় করতে হবে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, নিত্যপণ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে এবং কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও জেলা-উপজেলায় ভাগ করে অর্থ ব্যয় করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে বিশেষ সিএসআর খাতে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ সিটি করপোরেশন এলাকা এবং বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে এই অর্থ যাতে কোনো বিশেষ এলাকায় কেন্দ্রীভূত না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।

এ ছাড়া এসব অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক, শীর্ষ এনজিও’র মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা গ্রহণ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকগুলোকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় হিসাব সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, উপকারভোগীর সংখ্যা, সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নামসহ বিস্তারিত তথ্য ব্যাংক সংরক্ষণ করবে।

এ প্রসঙ্গে এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করার জন্য সব ব্যাংকের চেষ্টা থাকবে’

গত বছর করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য খাতের পাশে দাঁড়ায় ব্যাংকগুলো। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই খাতে ব্যাংকগুলোর অনুদান কমে গেছে। গত বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ব্যয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গতবছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রীর স্বল্পতা দেখা দেয়। তখন তারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করে। এরপর গত ১৬ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিএসআর খাতে ব্যয়ের ৬০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে নির্দেশনা প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ৫১৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর আগের বছরের(২০১৯) জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৪০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছিল ১২০ কোটি টাকা। গেলো বছরের প্রথম ছয় মাসে শিক্ষা খাতে  খাতে ব্যয় কমে দাড়ায় ৬০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে জুলাই-ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা, যা গেল বছরের প্রথম ৬ মাসে তা বেড়ে হয় ৯৬ কোটি টাকা। এদিকে ব্যাংকগুলোর সিএসআরের মূল্য উদ্দেশ্য অবহেলিত জনগণের জন্য অর্থ ব্যয় করা। কিন্তু এখন এসব অর্থের বেশিরভাগই হয় ব্যয় অন্য খাতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অর্থনীতিবিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিএসআর-এর অর্থ এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে বাাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছিলেন, ‘সিএসআরের মূল উদ্দেশ্য অবহেলিত জনগণের জন্য অর্থ ব্যয় করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানও এসব টাকা নিচ্ছে। এসব অপচয় বন্ধ করা উচিত। ব্যাংকের সিএসআর ব্যয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads