‘মারো ঠেলা হেঁইয়ো, শাবাশ জোয়ান হেঁইয়ো, আরো জোরে হেঁইয়ো’- এমন নানা কোরাসে কালীপূজা উপলক্ষে ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো কলাগাছের তৈরি ভেলার ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা। উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ডাইনের খালে বুধবার বিকেলে আওরাবুনিয়া সার্বজনীন কালী মন্দিরের উদ্যোগে এ বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার দুপুর থেকেই ডাইনের খালের পাড়ে ব্যতিক্রমী এই ভেলা বাইচের প্রতিযোগিতা দেখতে জড়ো হয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের বিপুল সংখ্যক মানুষ। দর্শকেরা নৌকায় চড়ে, খালের পাড়ে ও ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন আনন্দঘন এই প্রতিযোগিতা। তাছাড়া এই বাইচ উপলক্ষে খালের পাশে বসেছিল গ্রাম্য মেলা।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর কালীপূজা উপলক্ষে এলাকাবাসীর মধ্যে ভিন্নমাত্রার আনন্দ দিতে তারা কলাগাছের তৈরি ভেলার ব্যতিক্রমী এই বাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে । এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন আশপাশের গ্রামের প্রতিযোগীরা। এই ভেলা বাইচে ১০ টি দল ১০ টি ভেলা নিয়ে অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্বে প্রশান্ত কুমার দলের ভেলা প্রথম ও চৌধুরি হিস্যা সমীরন দলের ভেলা দ্বিতীয় হয়।
উপজেলা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার ভেতরে আওরাবুনিয়া গ্রাম। আর এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডাইনের খাল। এই খালেই আয়োজন করা হয়েছে ভেলাবাইচের এ প্রতিযোগিতা। খালটির এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ প্রতিযোগিতা চলে। মুন্সিরাবাদ এলাকা থেকে আসা দর্শণার্থী অনিন্দ্য হালদার শান্ত বলেন, ‘আমি এ ধরনের বাইচের প্রতিযোগিতা আগে কখনো দেখিনি। এমন আয়োজনের কথা শুনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে এসেছি। খুব আনন্দ পেয়েছি।’
দর্শনার্থী অনুশ্রী মন্ডল বলেন , ‘নৌকাবাইচ অনেক দেখেছি। কিন্তু কলাগাছের তৈরি ভেলাবাইচ জীবনে প্রথম দেখলাম। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখে সত্যিই মুগ্ধ’।
দৈনিক সরেজমিন বার্তা পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক মো:মোছাদ্দেক বিল্লাহ জানান ,‘আমার এলাকায় এমন ভিন্নধর্মী আয়োজনের কথা শুনে পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। আয়োজনটি ছোট হলেও দর্শকের কমতি ছিল না। দর্শকেরা আয়োজকদের সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়েছে’।
ভেলাবাইচে প্রথম হওয়া দলেন নেতা প্রশান্ত বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমরা ২০ টি কলাগাছ কেটে একটি ভেলা তৈরি করেছি। ভেলায় আমরা ২০ জন ছিলাম। প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।’
আয়োজক কমিটির সভাপতি মিল্টন দ্বারী বলেন , ‘আমরা আগে এই এলাকায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম। এখানকার বিলে ও খালে আগের মতো পানি নেই। কম পানিতে নৌকাবাইচের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই খালে ব্যতিক্রমী ভিন্ন আয়োজন করেছি। দর্শনার্থীদের ভিড় আমাদের মুগ্ধ করেছে। ভবিষ্যতে এই আয়োজনকে আরো বড় পরিসরে করতে চাই।